বেশি শীত অনুভব করা রোগের লক্ষণ নয় তো?
শীতের আমেজ বয়ে চলছে। এখন ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় প্রায় সবাই জবুথবু হয়ে পড়েন। শরীর গরম রাখার জন্য গোসলের সময় হালকা গরম পানি, শরীরে কেউ কেউ সরিষার তেল ব্যবহার করেন, আবার খাদ্যতালিকায়ও কেউ কেউ পরিবর্তন এনে থাকেন। এছাড়া গায়ে গরম কাপড় তো থাকেই। সবই মূলত শীতে শরীরকে গরম রাখার জন্য করা হয়।
নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরও অনেকেই অন্যদের থেকে বা তুলনামূলক একটু বেশি শীত অনুভব করেন। তারা নানা চেষ্টার পরও শরীরকে পুরোপুরি শীত থেকে দূরত্বে রাখতে পারেন না। কিন্তু কখনো কি মনে প্রশ্ন জেগেছে, কেন বেশি শীত অনুভব হয় আপনার। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরীর উষ্ণ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থাকলে স্বাভাবিকের থেকে বেশি শীত অনুভব হয়। এ জন্য খাদ্যতালিকায় নজর রাখার জরুরি। শীতে অন্যদের থেকে যদি আপনি বেশি ঠান্ডা অনুভব করেন, তা যেমন পুষ্টির ঘাটতি ইঙ্গিত করে থাকে। পাশাপাশি জটিল কোনো সমস্যার সংকেতও দিতে পারে। এবার তাহলে ভিটামিন ও পুষ্টির ঘাটতি শরীরের তাপমাত্রা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে তা জেনে নেয়া যাক।
কীভাবে শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে: শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থার্মোরেগুলেশন নামে পরিচিত। যা মূলত একটি ধ্রুবক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। সাধারণ প্রক্রিয়ায় এটি প্রায় ৯৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা বজায় রাখে। মস্তিষ্ক, রক্তের ধমনী ও ঘামের গ্রন্থিগুলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে একসঙ্গে কাজ করে। যা ঠান্ডা আবহাওয়ায় শরীর উষ্ণ রাখে এবং তাপের মধ্যে শরীর শীতল হয়।
এছাড়া ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, চরম তাপমাত্রা এবং ভিটামিন ও পুষ্টির ঘাটতির কারণে শরীর তাপমাত্রা বজায় রাখতে ব্যহত হয়। পুষ্টির অভাব যদি ব্যাপক হারে দেখা দিতে থাকে তাহলে তাপ উৎপাদন বা বজায় রাখার ক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ কারণে সবসময় ঠান্ডা অনুভব হয়।
জার্নাল অব থার্মার বায়োলজিতে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য এবং বাহ্যিক পরিবর্তনশীলতা বা অভ্যন্তরীণ ভারসাম্যহীনতা দ্বারা প্ররোচিত বাধা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন।
পুষ্টি ও ঠাণ্ডার মধ্যকার সংযোগ: শরীর যেসব পুষ্টির ওপর নির্ভর করে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আয়রন এবং কিছু ভিটামিন। যেমন ভিটামিন বি১২, ভিটামিন সি। যা শরীরে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। এসব উপাদান পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন ও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করে থাকে।
শরীর গরম রাখতে আয়রনের ভূমিকা: আয়রন হচ্ছে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের একটি ভিত্তি। এটি লোহিত রক্তকণিকার প্রোটিন, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন সরবরাহ ছাড়া পেশী ও টিস্যু পর্যাপ্ত পরিমাণ তাপ উৎপন্ন করতে পারে না। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া। এ সমস্যা থাকা ব্যক্তিরা প্রায়ই ঠান্ডা, ক্লান্তি ও দুর্বল বোধ করেন।
ভিটামিন বি১২ এর অভাব: ভিটামিনের এই উপাদান লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন বি১২ না থাকলে সুস্থ লাল রক্ত কোষ গঠনের জন্য সংগ্রাম করে। এ কারণে ভিটামিন বি১২ এর অভাবে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। আর দুর্বল সঞ্চালন ও ঠান্ডার অনুভূতি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে হাত ও পায়ের মতো অঙ্গে।
এছাড়া ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন সি ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টির অভাবেও শরীরে রক্ত সংক্রান্ত নানা সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। যা থেকে অধিক ঠান্ডা অনুভব হয়। এ কারণে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে পারেন। একইসঙ্গে সুস্থ-সবল থাকলে পরামর্শ অনুযায়ী পরিবর্তন আনতে পারেন খাদ্যতালিকায়ও।