মাত্র ১৮ ডলারে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক
বর্তমান বিশ্বে বিলিয়নিয়ার হিসেবে যে গুটিকয়েক ব্যক্তিকে সবাই একনামে চেনেন তারমধ্যে ইলন মাস্ক অন্যতম। ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশ সংস্থা স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক গোটা বিশ্বে তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার নাম। স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন তিনি। ব্যবসায়ী হিসেবে মাস্ক নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে, বিল গেটস, স্টিভ জবসসহ অন্যদের সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। ইলন মাস্ক ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন।
তবে ইলন মাস্কের সফলতার শীর্ষে আরোহণ অতটা সহজ আর আকর্ষণীয় ছিল না। অ্যাশলি ভ্যান্সের লেখা 'টেসলা, স্পেসএক্স, এন্ড দি কোয়েস্ট ফর এ ফ্যান্টাস্টিক ফিউচার' বইয়ে তার স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে। টেসলা এবং স্পেসএক্সের বিলিয়নিয়ার সিইও হওয়ার আগে ইলন মাস্ককে কিশোরবেলায় অদ্ভুত সব কাজ করে জীবন নির্বাহ করতে হয়েছে। ঘণ্টা প্রতি মাত্র ১৮ ডলারের বিনিময়ে তিনি বয়লার রুম পরিষ্কার করতেন। তখন তিনি কিশোর ছিলেন।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে, মাস্ক তার দক্ষিণ আফ্রিকার বাড়ি ছেড়ে কানাডায় পাড়ি দেন। উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার। কানাডায় জন্মগ্রহণকারী তার মায়ের কারণে তিনি কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু জীবন ধারনের জন্য তাকে নানা ধরনের কাজ করতে হয়েছে।
মাস্কের প্রথম কাজগুলির মধ্যে একটি ছিল সাসকাচোয়ানে তার চাচাতো ভাইয়ের খামারে। সেটির অবস্থান ছিল একটি ছোট গ্রামে যেখানে ৩০০ জনেরও কম লোক বাস করতো। সেখানে তিনি সবজি ক্ষেতে কাজ করতেন এবং শস্য নিড়ানি করতেন। এ যেন একজন টেক স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠাতার জীবন নয়, এক সাধারণ কৃষকের জীবন। এরপরে, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভ্যাঙ্কুভারে একটি কারখানায় চেইন করাত দিয়ে লগ কাটা শিখেছিলেন।
কানাডায় থাকাকালীন মাস্কের জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল- একটি কাঠের মিলের বয়লার রুমে কাজ করা। মাস্ককে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল কানাডার জীবনে কোন কাজে সবচেয়ে বেশি আয় করেছিলেন? তিনি কৌতুক করে বলেন, প্রতি ঘণ্টায় ১৮ ডলার-১৯৮৯ সালের জন্য যথেষ্ট ভালো ছিল কিন্তু নিমিষেই শেষ হয়ে যেত। এই কাজটি ভীষণ ক্লান্তিকর এবং যথেষ্ট বিপজ্জনক ছিল। একটি হ্যাজমাট স্যুট পরে ছোট টানেলের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে কাজ করতে হতো। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে বেশিরভাগ কর্মী বেশিদিন টিকতে পারতো না। মাস্কের মতে, তার সাথে কাজ শুরু করা ৩০ জনের মধ্যে তৃতীয় দিনে মাত্র পাঁচজন টিকে ছিল। সপ্তাহ শেষে মাস্ক এবং আর দুজন অবশিষ্ট ছিল।
ইলন মাস্ক তার আত্মজীবনীতে বলেছিলেন, 'টিকে থাকার জন্য এই কাজ থেকে মুক্তির কোনো উপায় ছিল না। প্রতিদিন ছোট্ট একটি জায়গায় হামাগুড়ি দিয়ে বেলচায় করে উত্তপ্ত কয়লা টানেলের অন্যপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিতে হতো। টানেলের ভেতর এত উত্তাপ থাকতো যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক ছিল'।
ইয়াহু ফাইন্যান্স অবলম্বনে রুবাইয়াত রিক্তা