রাতে ঘুমাতে গেলেই চুলকানি কারণ ও সমাধান জেনে নিন

এমন অনেকেই আছেন যারা সারাদিন ভালো থাকলেও রাতে ঘুমাতে গেলেই শরীরে চুলকানি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে নকচার্নাল প্রুরাইটাস বলা হয়। এই চুলকানি মাঝেমধ্যে এতটাই তীব্র হয় যে ঘুম ভেঙে যায় বা ঘুম আসতেই চায় না। কখনও কখনও এটি এমনকি অজান্তেই ঘুমের মধ্যে চুলকানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম থেকে শুরু করে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যারও ইঙ্গিত হতে পারে।
চিকিৎসকরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। রাতে চুলকানির সম্ভাব্য কারণ, চিকিৎসা, কী কী এড়িয়ে চলা উচিত এই সব বিষয় উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে এবং কবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
চুলকানির প্রাকৃতিক কারণ: অনেক সময় রাতে ত্বকে চুলকানির পেছনে থাকে শরীরের প্রাকৃতিক কিছু প্রক্রিয়া। বিশেষ করে, আমাদের শরীরের দৈনিক জৈব ছন্দ বা সার্কাডিয়ান রিদম রাতে ত্বকের নানা কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। এতে ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, পানির ভারসাম্য এবং ত্বকের সুরক্ষার প্রাকৃতিক দেয়ালের কার্যকারিতা পরিবর্তিত হয়। নিচে কয়েকটি কারণ আলচনা করা হলো:
১. সার্কাডিয়ান রিদম: সার্কাডিয়ান রিদম ত্বকের কাজকর্মে প্রভাব ফেলে। রাতে শরীরের তাপমাত্রা ও রক্তপ্রবাহ বাড়ে, যার ফলে ত্বক গরম হয়ে গিয়ে চুলকানি তৈরি করতে পারে।
২.শরীরের পানি কমে যাওয়া: রাতের বেলা ত্বক সাধারণত বেশি পানি কমে যায়। সে কারণে এই সমস্যা হয়। দেখা যায় শুষ্ক শীতের দিনে ত্বকে বেশি চুলকানির সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এর মূল কারণ শরীরে পানির অভাবের শুষ্কতা। আর এ কারণেই দিনে কাজের ব্যস্ততায় চুলকানির দিকে মনোযোগ না গেলেও রাতে যখন সব নিরব, তখন অনুভূতিটা অনেক বেশি তীব্র মনে হয়।
৩.পোকামাকড়ের কারণে চুলকানি: বিছানায় লুকিয়ে থাকা বেডবাগ, স্ক্যাবিস, উকুন কিংবা পিনওয়ার্মের মতো পোকাগুলো সাধারণত রাতে বেশি সক্রিয় হয়। এই পোকাগুলোর কামড়, বিষ্ঠা বা চলাফেরা ত্বকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানির অনুভব তৈরি করতে পারে। অনেক সময় ঘুমের মধ্যেও আপনি অজান্তে চুলকাতে থাকেন।
স্বাস্থ্যজনিত কারণে রাতে চুলকানি বাড়ার সম্ভাবনা: শরীরের প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান রিদম ছাড়াও এমন অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। যেগুলোর কারণে ত্বকে চুলকানির প্রবণতা রাতে আরও বেশি বেড়ে যায়। নিচে এমন কিছু সাধারণ ও গুরুতর কারণ তুলে ধরা হলো:
চর্মরোগ: একজিমা, ছুলি, সোরিয়াসিস, হাইভস
কিডনি বা লিভারের রোগ
আয়রন ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া
থাইরয়েড সমস্যা
মানসিক চাপ, বিষণ্নতা বা স্কিজোফ্রেনিয়া
রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম
ক্যানসার (যেমন: লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা)
নার্ভজনিত রোগ: ডায়াবেটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, শিংলস
অ্যালার্জি: খাদ্য, প্রসাধনী, ওষুধ ইত্যাদির প্রতি সংবেদনশীলতা
গর্ভাবস্থা
ঘরোয়া চিকিৎসা: রাতে চুলকানির সমস্যায় নাজেহাল হয়ে গেলে কিছু ঘরোয়া উপায় মানার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে চুলকানির সমস্যার সমাধান মেলে। এগুলো হলো:
মানসিক চাপ থেকে চুলকানি: শুনতে অবাক লাগলেও অনেক সময় আমাদের মানসিক চাপ চুলকানি বাড়িয়ে দেয়। এ অবস্থায় জীবনধারাগত পরিবর্তনগুলো সহায়ক হতে পারে বলছেন চিকিৎসকরা। যেমন ধ্যান, যোগব্যায়াম এবং প্রগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন মানসিক চাপ কমায় যা একই সঙ্গে চুলকানি কম হতে সহায়তা করে। এছাড়াও পর্যাপ্ত ঘুমান এবং রুটিন মেনে চলুন।
অ্যালকোহল-মুক্ত ময়েশ্চারাইজার দিনে ও ঘুমের আগে ব্যবহার করুন।
চুলকানির স্থানে ঠান্ডা পানির সেঁক বা ভেজা তোয়ালে রাখা।
লুকওয়ার্ম পানিতে ওটমিল বা বেকিং সোডা দিয়ে গোসল।
ঘরের আর্দ্রতা বাড়াতে হিউমিডিফায়ার চালু রাখা।
যেসব এড়িয়ে যেতে হবে: চুলকানির সমস্যার সমাধানে বেশকিছু বিষয় এড়িয়ে যেতে হবে। এগুলো হলো:
উল বা চুলকানির পোশাক পরে ঘুমাবেন না, নরম সুতি বা সিল্ক ব্যবহার করুন
ঘরের তাপমাত্রা ৬০–৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা।
ঘুমের আগে ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল পরিহার করুন
পারফিউমযুক্ত প্রসাধনী ও সাবান এড়িয়ে চলুন
ত্বক চুলকালে চুলকানো থেকে বিরত থাকুন এবং নখ ছোট করে রাখুন
কখন চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন: চুলকানিকে স্বাভাবিক ভেবে বসে থাকা যাবে না। সমস্যা জটিল হওয়ার আগেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যখনই দেখবেন দুই সপ্তাহ কেটে গেলেও চুলকানি কমছে তখন আর অপেক্ষা করা যাবে না। একই সঙ্গে চুলকানির জন্য ঘুমাতে না পারলে অপেক্ষা না করাই ভালো। যদি দেখেন চুলকানির পাশাপাশি ওজন কমে যাওয়া, জ্বর, দুর্বলতা বা র্যাশ দেখ দিচ্ছে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে।
রাতে চুলকানির কারণ হতে পারে দেহের প্রাকৃতিক পরিবর্তন, ত্বকের শুষ্কতা, পোকামাকড় কিংবা কোনো গোপন স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি আপনার ঘুম ও জীবনের মানের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই প্রয়োজন বুঝে চিকিৎসা নেয়া, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা এবং শরীরের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দেয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: হেলথলাইন
Comments