আজ প্রথমবারের মতো বিপিএমসিএ নির্বাচন

নানা বিতর্কের মধ্য দিয়ে দেশে প্রথমবার সরাসরি ভোটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) নির্বাচন। আজ বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছর অন্তর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরে সরাসরি কোন নির্বাচন হয়নি। এই সিলেকশনের মাধ্যমেই কতিপয় পদধারীরা পদে আসীন হয়েছেন। ফলে সংগঠনে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদের সৃষ্টি হয়। সেই কর্তৃত্ববাদের অবসানের লক্ষ্যেই দাবি উঠে সরাসরি ভোটের।
৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান সংগঠনের বর্তমান কমিটির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন খান। তারপর থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটের দাবি আরও জোরাল হয়। ফলে বর্তমান কমিটি বাধ্য হয় নতুন নির্বাচনের পথে যেতে।
নির্বাচন দিতে বাধ্য হলেও বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনী বোর্ড গঠন এবং নির্বাচনী তফসিলে ইচ্ছাকৃতভাবেই অসংগতি সৃষ্টি। নির্বাচন বাতিল করে সিলেকশনের মাধ্যমে বর্তমান সভাপতির পছন্দের কাউকে শীর্ষপদে বসাতেও বিভিন্ন মহল জোর তদবির চালিয়েছেন। তবে সদস্যদের জোর প্রতিবাদে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
বিপিএমসিএ'র কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে এবার দুটি প্যানেল প্রতিদ্বদ্বীতা করছেন। একটি হলো মহিউদ্দিন-মুকিত পরিষদ। আর অন্যটি হলো আফরোজা-মোয়াজ্জেম পরিষদ। নির্বাচনে ৫৫ টি মেডিকেল কলেজের ১১০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি নির্বাচন করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্যানেলের মধ্যে আফরোজা-মোয়াজ্জেম প্যানেলে বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির ১৩ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। তাছাড়া এই প্যানেলে প্রতিদ্বন্দিতাকারীরা অতীতের অন্যান্য কার্যনির্বাহী কমিটিতেও বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পক্ষান্তরে মহিউদ্দিন-মুকিত প্যানেলটি যাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তারা অতীতে কখনও কোন কার্যনির্বাহী কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন নি। এই প্যানেলে রয়েছে নতুন কিছু করার তথা সংগঠনকে বদলে দেয়ার প্রত্যয়ী এক ঝাঁক নতুন প্রার্থী। নির্বাচনের প্রচারকালে আফরোজা-মোয়াজ্জেম প্যানেলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ চাউর হয়েছে। এ সব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের নাম করে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে শতশত কোটি টাকা আত্মসাৎ, বিপিএমসিএ'র সংঘ বিধি-৫ অনুযায়ী বাৎসরিক চাঁদা ২৪ হাজার টাকা হলেও প্রতিটি মেডিকেল থেকে ২ লাখ বা তার বেশি টাকা চাঁদা আদায় প্রভৃতি।
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোতে সর্বমোট ৪৬৭ টি সিট ফাঁকা রয়েছে। এই ফাঁকা আসনে ভর্তির জন্য পোর্টাল উন্মুক্তকরণের কথা বলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠলে, চাঁদাবাজির অংশীদারের দুর্নামের ভাগীদার হওয়ার শঙ্কা থেকেই পোর্টাল উন্মুক্ত করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিপিএমসিএ'র সদস্যরা মনে করছেন, চব্বিশের বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে পুরানো ক্ষমতাসীনদের কোনো জায়গা নেই। নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে নতুনেরা। এরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে আজ অনুষ্ঠিত বিপিএমসিএ'র নির্বাচনেও।
Comments