গাজা দখলে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনায় ফের উত্তাল বিশ্ব

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দিয়েছে। একদিকে বিশ্ব নেতারা যখন এই পদক্ষেপকে 'মহাবিপর্যয়ের শুরু' বলে উল্লেখ করছেন, অন্যদিকে জিম্মি পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করছেন, রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন জিম্মিদের মৃত্যুই এখন 'পছন্দ এবং কাম্য' হয়ে দেখা গেছে নেতানিয়াহুর কাছে। বর্তমানে গাজায় বন্দি এক জিম্মির বাবা ইহুদা কোহেন সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'নেতানিয়াহু চায় জিম্মিরা মরে যাক, তাহলে তিনি গাজায় আরও নির্মম হামলা চালাতে পারবেন।' তিনি অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী কেবল নিজের রাজনৈতিক অবস্থান টিকিয়ে রাখতেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইসরায়েলি নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা শুক্রবার (৮ আগস্ট) গাজা নগরী দখলের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন দিয়েছে। যদিও সেনাপ্রধান আয়াল জামির এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন, তবুও মন্ত্রিসভা সেই বিকল্প পরিকল্পনা নাকচ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেই হামলার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আগামী ৭ অক্টোবর প্রথম ধাপ শুরু হবে।
নেতানিয়াহুর এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে গোটা বিশ্বে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার এই পদক্ষেপকে 'ভুল' বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।স্টারমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একে 'গণহত্যামূলক ও সম্প্রসারণবাদী নীতি' বলে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার টার্ক বলেছেন, 'এটি আন্তর্জাতিক আদালতের রায় লঙ্ঘন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিরোধিতা।' অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও সুইজারল্যান্ডও উদ্বেগ প্রকাশ করে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠন এবং জিম্মি পরিবারের ফোরাম বলছে, এই সিদ্ধান্তে জিম্মি ও সেনাদের জীবনের হুমকি বাড়ছে। তারা বলেছে, 'এটি সম্পূর্ণ বিপর্যয়কর সিদ্ধান্ত—যুদ্ধ নয়, দরকার আলোচনার।'
গাজার ওপর সাম্প্রতিক ইসরায়েলি পরিকল্পনায় বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ বেড়েছে। জাতিসংঘ, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশ গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার ও যুদ্ধ বন্ধের জন্য জোরালো দাবি জানিয়েছে।
নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত শুধু ইসরায়েলের অভ্যন্তরেই নয়, বিশ্বব্যাপী প্রশ্নের মুখে পড়েছে। মানবিক বিপর্যয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ এক বিতর্ক। এখন দেখার বিষয়-এই চাপের মুখে ইসরায়েল আদৌ তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনে কি না।
Comments