ইন্দোনেশিয়ায় ফেরি ডুবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬, নিখোঁজ ৩০

ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভার বানিউয়াংগি থেকে বালি দ্বীপে যাওয়ার পথে ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয় হয়েছে। আজ শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি ও রয়টার্স।
ফেরির নথি অনুযায়ী, যাত্রী ও ক্রুসহ এতে মোট ৬৫ জন আরোহী ছিলেন। ম্যানিফেস্টে ৫৩ যাত্রী, ১২ ক্রু সদস্যে ও ২২টি যানবাহনের কথা বলা হয়েছে।
তবে ইন্দোনেশিয়ায় নথিতে উল্লেখিত সংখ্যার সঙ্গে প্রকৃত আরোহীর সংখ্যায় প্রায়ই গড়মিল পাওয়া যায় বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই ফেরির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ছিল ৬৭ জন আরোহী ও ২৫টি যানবাহন।
বানিউয়াংগি থেকে বালির দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। গত বুধবার গভীর রাতে ওই পথ পাড়ি দেওয়ার সময় বৈরি আবহাওয়ার কারণে ফেরিটি ডুবে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৩০ আরোহী নিখোঁজ আছেন। এর আগে ২৯ আরোহীকে পানি থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। গতকাল ৩১জনকে উদ্ধারের কথা জানানো হয়েছিল।
উদ্ধার কর্মকর্তারা জানান, নিহত ছয় জনের মধ্যে একটি তিন বছর বয়সী শিশুও রয়েছে।
সমুদ্র ও আকাশপথে উদ্ধার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আজ সকালে উদ্ধারকাজের বিস্তৃতি বাড়িয়ে পূর্ব জাভা ও বালির উপকূল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জাতীয় উদ্ধার সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ক কর্মকর্তা রিবুত একো সুয়াৎনো সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
জাভার কেতাপাং বন্দর থেকে বালির গিলিমানুক বন্দরে বছরজুড়ে ফেরি চলাচল অব্যাহত থাকে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশটির ব্যস্ততম এই নৌপথ পার হতে প্রায় এক ঘণ্টার মতো সময় লাগে। এক দ্বীপ থেকে আরেক দ্বীপে গাড়ি নিয়ে ভ্রমণ করার পথে অনেকেই এই ফেরি ব্যবহার করেন।
কেএমপি তুনু প্রাতামা জায়া নামের ফেরিটি যাত্রা শুরুর ২৫ মিনিটের মাথায় ডুবে যায়। অন্তত ৩০৬জন উদ্ধারকর্মী এখন সেখানে কাজ করছেন।
বৈরি আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উদ্ধার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে আবারও উদ্ধারকাজ শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে নৌকা, বড় জাহাজ ও একটি হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে। এগুলো পরিচালনার দায়িত্বে আছেন নৌবাহিনী ও পুলিশের প্রায় ১০-১২ জন কর্মকর্তা।
বৃহস্পতিবার সকালে ফেরির লাইফবোটে উঠে অন্তত চার ব্যক্তি নিজেরাই নিজেদের প্রাণরক্ষা করতে সক্ষম হন।
শুরুতে বৈরি আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ বিঘ্নিত হয়। সে সময় আড়াই মিটার উঁচু ঢেউ উঠে এবং প্রবল বাতাস বইতে থাকে।
পরিবহন মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ফেরির সব আরোহী ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। সেখানে কোনো বিদেশি যাত্রী ছিল না।
এই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন বেজো সান্তোসো (৫২)। তিনি রয়টার্সকে বলেন, বন্দর ছেড়ে যাওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পর ফেরিটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে দুলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ফেরি ডুবে যেতে শুরু করলে বেশ কয়েকজন আরোহী পানিতে ঝাঁপিয়ে প্রাণ বাঁচানোর উদ্যোগ নেন।
অপর যাত্রী একো তোনিয়ানসিয়াহ (২৫) এই দুর্ঘটনা নিজের বাবাকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, হঠাত ফেরি এক পাশে কাত হয়ে ডুবতে শুরু করে। এ সময় পুরো ফেরি দুলতে শুরু করলে আরোহীরা আতংকিত হয়ে পড়েন এবং লাইফ জ্যাকেটের খোঁজ করতে শুরু করেন।
ইন্দোনেশিয়ায় নৌ-দুর্ঘটনা নিয়মিত হয়ে থাকে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে বড় কারণ হিসেবে আছে শিথিল নিরাপত্তা মানদণ্ড ও তা মেনে না চলার প্রবণতা। পাশাপাশি বৈরি আবহাওয়াও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
মার্চে বালির কাছে সমুদ্রে একটি নৌকা উল্টে গেলে এক অস্ট্রেলীয় নারী নিহত হন এবং অপর এক ব্যক্তি আহত হয়। ওই নৌকায় ১৬ জন আরোহী ছিলেন। ২০১৮ সালে সুমাত্রা দ্বীপে ফেরি ডুবে ১৫০ এর বেশি মানুষ মারা যান।
Comments