ফরিদপুর জিলা স্কুলে বহিরাগতদের হামলায় জেমসের কনসার্ট পণ্ড, আহত-৩০
ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৮৫ বর্ষ উদ্যাপন ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের শেষ দিনে বহিরাগতদের ছোড়া ইটপাটকেলে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেমসের কনসার্ট পণ্ড হয়ে গেছে। এ ঘটনায় আয়োজক কমিটির আহ্বায়কসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকেই সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে ফরিদপুর জিলা স্কুল চত্বরে কনসার্ট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি শুধু নিবন্ধিত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ছিল। তবে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেমসের আগমনের খবরে কয়েক হাজার অনিবন্ধিত বহিরাগত দর্শক স্কুল প্রাঙ্গণের বাইরে জড়ো হন। ভেতরে প্রবেশের অনুমতি না পেয়ে তাঁরা পাশের মুজিব সড়কে অবস্থান নেন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বাইরে দুটি বড় প্রজেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়। এরপরও রাত সাড়ে ৯টার দিকে বহিরাগতদের একটি অংশ স্কুলের দেয়াল টপকে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। এতে বাধা দিলে তারা উত্তেজিত হয়ে স্কুল প্রাঙ্গণ ও মঞ্চের দিকে একের পর এক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
এ সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বাধা দিলে পরিস্থিতি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বহিরাগতদের ছোড়া ইটের আঘাতে স্কুল প্রাঙ্গণের ২৫ থেকে ৩০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ফরিদপুর জিলা স্কুলের ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়া ৪–৫ জন বহিরাগত দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাঁদের আটক করে মারধর করেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় রাত ১০টার দিকে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মুস্তাফিজুর রহমান শামীম মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেন, ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের নির্দেশে জেমসের কনসার্ট বাতিল করা হচ্ছে।
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের প্রচার ও মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক রাজীবুল হাসান খান বলেন, "জেমসের কনসার্ট সফল করার জন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বহিরাগতদের হামলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আমাদের স্কুলের অন্তত ১৫–২০ জন শিক্ষার্থী ইটের আঘাতে আহত হয়েছে।"
নিরাপত্তা উপপকমিটির সদস্য ও ফরিদপুর জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বেনজীর আহমেদ তাবরীজ বলেন, বাইরে থেকে ছোড়া ইটপাটকেলে পুনর্মিলনী কমিটির আহ্বায়কসহ ২০ থেকে ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, "জেমস আসার খবরে স্কুলের সামনে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়। এত সংখ্যক মানুষকে স্কুল প্রাঙ্গণের ভেতরে জায়গা দেওয়া সম্ভব ছিল না। বহিরাগতদের প্রবেশে বাধা দেওয়ায় কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।"
প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয়ের একটি ফরিদপুর জিলা স্কুল। ১৮৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ১৮৫ বছর ধরে এ অঞ্চলের শিক্ষা, সংস্কৃতি, আন্দোলন ও সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
Comments