দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদ্রাসার আড়ালে ককটেল বোমা তৈরী
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। মাদ্রাসা পরিচালনার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ককটেল ও বোমা তৈরির কার্যক্রম চলছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ওই মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
স্থানীয়রা জানান, হাসনাবাদ এলাকার উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা নামে পরিচিত একতলা ভবনে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত চারজন আহত হন। বিস্ফোরণের তীব্রতায় মাদ্রাসার একাধিক কক্ষের দেয়াল ধসে পড়ে এবং আশপাশের ভবনেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ককটেল, দাহ্য কেমিক্যাল এবং বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এসব বিস্ফোরক আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছিল কি না, সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দুপুরের দিকে বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। মুহূর্তের মধ্যেই ভবনের চারপাশের দেয়াল উড়ে যায়। একতলা ভবনের দুটি কক্ষের দেয়াল সম্পূর্ণ ধসে পড়ে এবং ছাদ ও বিমে ফাটল দেখা দেয়। পাশাপাশি সংলগ্ন একটি ভবনের দেয়াল ও জানালাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আফসার উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বলেন, মাদ্রাসাটিতে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত না থাকায় বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় মাদ্রাসার পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে,উমায়েত (১০) ও আব্দুল্লাহ (৭) আহত হন। আহতদের মধ্যে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
জানা গেছে, ভবনের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার পাঠদান কার্যক্রম চলত। অপর পাশে একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন পরিবারসহ প্রায় তিন বছর ধরে বসবাস করছিলেন।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির জানান, বিস্ফোরণে তাঁদের ভবনের একটি অংশ ফেটে গেছে এবং ঘরের ভেতরের আসবাবপত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আরেক বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, গ্যারেজে গাড়ি রেখে বাসায় ফেরার সময় ওপর থেকে ইট পড়ে তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। পরে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
বাড়ির মালিক পারভীন বেগম জানান, প্রায় তিন বছর আগে তাঁর বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন মাদ্রাসাটি পরিচালনা করতেন। পরে তিনি তাঁর শ্যালক শেখ আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসার দায়িত্ব দেন। মাদ্রাসার আড়ালে কোনো অবৈধ কার্যক্রম চলছিল,এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেন।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম জানান, ঘটনাস্থলে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে। অভিযানকালে ককটেল, দাহ্য পদার্থ ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি।
Comments