ধানের শীষ ও দাঁড়ি পাল্লায় সরগরম গাইবান্ধা সদর
বাংলাদেশের ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে আসলে কখন অনুষ্ঠিত হবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে আগমী নির্বাচনে গাইবান্ধায় বড় দুই দলের ব্যাপক জনপ্রিয় দলীয় প্রতীক-ধানের শীষ আর দাঁড়িপাল্লার লড়াই জমে উঠবে, তা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
বিএনপির ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী:
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে অধ্যাপক ডা. খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া,
গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনে আনিছুজ্জামান খান বাবু,
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর–পলাশবাড়ী) আসনে ডা. মইনুল হাসান সাদিক,
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে শামীম কায়সার লিংকন,
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি–সাঘাটা) আসনে ফারুক আলম সরকার।
তারা সবাই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
অপরদিকে,আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিছুদিন আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গাইবান্ধা জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি।
জামাতের ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী:
গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের আমির ও গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের এমপি প্রার্থী আব্দুল করিম সরকার, গাইবান্ধা জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের এমপি প্রার্থী ডা. আব্দুর রহিম সরকার, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসের প্রার্থী মো. মাজেদুর রহমান, নায়েবে আমির ও গাইবান্ধা-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি) আসনের প্রার্থী আব্দুল ওয়ারেস এবং জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা নজরুল ইসলাম লেবু।
গাইবান্ধার রাজনীতিতে বিএনপির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। নব্বই দশকের পর থেকে দলটির এ জেলার কয়েকটি আসনে জয়ের ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ বিএনপি গাইবান্ধা সদর-২ আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর, গত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। এবার নতুন নেতৃত্ব ও তৃণমূল পর্যায়ে সক্রিয় কর্মীদের অংশগ্রহণে বিএনপি পুনরায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে চায়।
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পাঁচবার, জাতীয় পার্টি দুইবার, স্বতন্ত্র দুইবার ও বিএনপি প্রার্থী একবার নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৭৩, ১৯৭৯ ও ২০০১ সালের আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমান, ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র আবদুর রউফ মিয়া, ১৯৮৮ সালের (৩ মার্চ) স্বতন্ত্র সাবেক সেনা কর্মকর্তা আজগর আলী খান, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির আবদুর রশিদ সরকার, ১৯৯৬ সালের (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির সাইফুল আলম সাজা, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে মাহাবুব আরা বেগম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে গাইবান্ধা-২ আসনে সর্বশেষ স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ্ সারোয়ার কবীর নির্বাচিত হয়।
নির্বাচন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ১৯১ জন। এ বছর নতুন ভোটার হয়েছেন ২৩ হাজার ৮১ জন। তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটারও রয়েছেন ৬ জন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ৪ লাখ ১০ হাজার ২৭৮ ভোটার ভোট দেবেন।
গাইবান্ধার রাজনীতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় ও প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ খুব কম পেয়েছে। আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ শাসন আমলে দমন-পীড়নের শিকার হন দলটি। তারপরেও ২০১৪ সালে আব্দুল করিম গাইবান্ধা সদর উপজেলায় নির্বাচিত হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর থেকে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, জামায়াতের স্থানীয় সংগঠন ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রার্থী আব্দুল করিম সরকারের নেতৃত্বে তারা ঘরে ঘরে প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
স্থানীয় শরিফুল ইসলাম বলেন, গাইবান্ধা-২ আসনের নির্বাচনী মাঠ সরগরম হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি রাজনৈতিক দলগুলো শহর ও গ্রামে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য উঠান বৈঠক, মিটিং ও আলোচনা সভা করে যাচ্ছেন। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলার এই আসন রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গাইবান্ধা সদর বিএনপির প্রার্থী আনিছুজ্জামান খান বাবু বলেন, 'বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আমি দীর্ঘদিন দলের জন্য শ্রম দিয়েছি, দল আমাকে মূল্যয়ন করেছে। আমি সব-সময় গণমানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি। সাধারন মানুষের ভালোবাসা আমার সাথে আছে। আমরা ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে উঠান বৈঠক ও ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার করছি। আমি আশা করছি,আমাদের জয় হবে।
জামায়াতের সদর আসনের প্রার্থী মো. আব্দুল করিম সরকার বলেন, 'জামায়াত বরাবরই জনগণের পাশে থেকে সমাজসেবার কাজ করে। আমাদের প্রার্থীকে জনগণ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। আমরা জয়ের জন্য আশাবাদী।
Comments