দীর্ঘ অপেক্ষার পর ইলিশ কেনাবেচায় উৎসবের আমেজ চাঁদপুরে
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ইলিশ কেনাবেচায় জমে উঠেছে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী বড় স্টেশন মাছঘাট। ইলিশের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে এই মাছের প্রধান কেন্দ্র। ইলিশ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর থেকেই মূলত এই কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ২৬ অক্টোবর রবিবার ভোর থেকেই জমে উঠেছে মাছের বাজার।
নদী ও সাগর থেকে আসা ইলিশে এখন ভরপুর ঘাট। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, বরিশাল, নোয়াখালী ও সন্দ্বীপসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রলার বোঝাই করে রুপালি শস্য আসছে চাঁদপুরে। যদিও পদ্মা-মেঘনার স্থানীয় ইলিশের সরবরাহ এখনো তুলনামূলকভাবে কম, তবুও দক্ষিণাঞ্চল ও সাগরের ইলিশের প্রাচুর্য মাছঘাটকে সরগরম করে তুলেছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ঘাটে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসায় স্বস্তিতে রয়েছেন জেলে, শ্রমিক, আড়তদারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে। মাছঘাটের ব্যবসায়ী মিজান, সজীব, শাহেদ সহ আরো অনেকে জানান, ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়েছে। শুধু স্থানীয় ক্রেতাই নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা ইলিশ কিনতে চাঁদপুরে আসছেন।
তবে, ইলিশের দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তুলনামূলকভাবে কম ওজনের সাগরের ইলিশ কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশের দাম এখনো চড়া। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, আগামী দিনগুলোতে ইলিশের আমদানি আরও বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।
বর্তমানে মাছঘাটে ১ কেজি ওজনের ইলিশ ২,০০০ থেকে ২,৩০০ টাকা বা তার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ছোট ইলিশের কেনাবেচা বেশি চলছে, যা দেশের বিভিন্ন জেলায় বাক্সবন্দী করে পাঠানো হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ইলিশ শূন্য থাকার পর মাছঘাটে এমন উৎসবের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই। এই কর্মচাঞ্চল্য ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুরের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, প্রাকৃতিক মাছ ইলিশ আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে জেলের জালে কম বেশি ধরা পড়ে। তাই সামনে ভালো সিজন আসছে ইলিশের। তখন দাম কমবে বলে প্রত্যাশা রাখছি। তবে এবারের নিষেধাজ্ঞার পর ভালো পরিমাণ ইলিশ ঘাটে আসতে শুরু করেছে। এভাবে আরও কয়েকদিন চললে দাম প্রতি কেজি ২০০/৩০০ করে কমে যাবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, অভিযানের দিনগুলোতে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিতভাবে নদীতে কাজ করেছে। বিভিন্ন সময়েই অভিযানে অবৈধ জাল জব্দ করা, অসাধু জেলেদের আটক করে মামলা ও জেল-জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। এমনকি নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় খাদ্য সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এবারের সফল অভিযান হওয়ায় জেলেরা বড় বড় ইলিশ নদীতে পাবে। তবে ইলিশের দাম ক্রেতাদের নাগালে রাখতে তা মনিটরিংয়ে আমরা সর্বদা হাটবাজারগুলোতে নজরদারি রাখব।
Comments