আলমডাঙ্গার বিলের দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ; আহত অন্তত ১০

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে একটি মালিকানা বিল দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-সমর্থকদের মধ্যে বুধবার দুপুরে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
দফায় দফায় হওয়া এই রক্তাক্ত সংঘাতে নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মজিবুল ও কোরবান নামে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি আহতরা স্থানীয় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর গ্রামের বর্তমান মেম্বার ও হারদী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলী চেংগীস গত তিন বছর আগে প্রায় ৭০ জন স্থানীয়দের কাছ থেকে ১০ বছরের চুক্তিতে একটি পরিত্যক্ত বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন এবং প্রতি বছর নিয়মিত লিজের টাকা পরিশোধ করতেন।
তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিএনপি-সমর্থিত একটি গ্রুপ বিলটির মালিকানা দাবি করে মনসুর আলী চেংগীস মেম্বারের লিজ চুক্তি আর মানবে না বলে ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা তৈরি হয়, যা একাধিকবার সালিশ-বৈঠকের পরও মেটেনি।
মঙ্গলবার মনসুর আলী চেংগীস মেম্বার ও বিএনপি-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, অভিযোগকারীদের দাবি, হামলাকারীরা রামদা, ফালা, ছুরি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কুপিয়ে অন্তত ১০ জনকে রক্তাক্ত জখম করে।
আহতদের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন—হারদী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিল হক, মেম্বার মনসুর আলী চেংগীস, ডালিম, কুদ্দস জোয়ার্দার, সামসুল, আয়ুব, চিহ্নিত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী ইমাদুল, বিস্কিট এবং চেংগীস মেম্বারের ছেলে ছানিম ও তানিম।
স্থানীয়রা জানান, "বিলের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। পূর্বে মাছে বিষ দেওয়া বা পাটের দাগ কেটে নষ্ট করার মতো ঘটনা ঘটলেও এবার তা সরাসরি রক্তাক্ত সংঘর্ষে রূপ নিল।" এই হামলার পর পুরো কেশবপুর গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উভয়পক্ষের আহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ গ্রুপের মনসুর আলী চেঙ্গিস এর পুত্র সানিম এবং
কামাল এর ছেলে মোঃ জুবায়েদ ইসলাম।
বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে কেশবপুর এলাকার মৃত আব্দুল সাত্তার এর ছেলে কুরবান আলী, আলিজাম এর ছেলে মুজিবুল,শাহাজান এর ছেলে রকিবুল ইসলাম,মৃত আব্দুর রহমান এর ছেলে শাহাবুল আলী
সাত্তার মালিকের ছেলে ইয়ামিন আলী, এবং
বজলুর ছেলে মোঃ আসাদুল ইসলাম, তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মজিবুল ও কোরবানকে কুষ্টিয়া মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ শারমিন আক্তার জানান, নারীসহ মোট আটজন ব্যক্তি গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। আহতদের মধ্যে দু'জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে । বাকি ছয়জন বর্তমানে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহতদের কয়েকজন স্থানীয়ভাবেও চিকিৎসা নিয়েছেন।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাসুদুর রহমান, পিপিএম জানান, "সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।"
Comments