বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসের সাবেক হিসাব রক্ষক জাহিদা আনোয়ারের সম্পদের পাহাড়

সদস্য সাবেক বরিশাল সিভিল সার্জন অফিসে হিসাব রক্ষক জাহিদা আনোয়ার মুন্নি। সরকারী বেতন ভাতায় তার বর্তমান সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বমহলে। স্বামী তেমন আয় নেই সন্তানকে পড়ান বেসরকারী মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বরিশাল নগরীর সোবাহান মিয়ার পুল এলাকায় ৪তলা বিশিষ্ট বিলাশবহুল ভবন। এছাড়াও রয়েছে অর্থ সম্পদ। সরকারী প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষক হিসেবে চাকুরী করে এত অল্প সময়ে এত সম্পদের মালীক কিভাবে হলেন সে প্রশ্ন তার নিজ এলাকার বাসিন্দাদের। বিলাশবহুল জীবনযাপন আর অর্থবৃত্তের কারনে মাটিতে পা পড়েনা তার। দুই চারজন সংবাদ কর্মি তার আচলের নিচে থাকে বলেও এ প্রতিবেদককে হুমকি দিয়েছেন জাহিদা আনোয়ার মুন্নি। এর আগেও অনেক সংবাদ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ হয়েছে তাতে কিছুই আসে যায়নী । টাকার বড়াইয়ে অন্ধ প্রায় এই হিসাব রক্ষক।
বিগত সরকার আওয়ামী লীগ আমনে বরিশাল সিভিল সার্জনের প্রধান সহকারী, অফিস সহকারী, ও হিসাব রক্ষক জাহিদা আনোয়ার মুন্নি মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে সিভিল সার্জন থেকে জেলার সব গুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের এমএসআর সাপ্লাই, মেডিসিন সহ যাবতীয় মালামাল ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র একছাটিয়া একজন ব্যাক্তিকে পাইয়ে দিতেন জাহিদা আনোয়ার মুন্নির এই সেন্ডিকেট।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে গত আওয়ামী লীগ আমলে বরিশাল সিভিল সার্জন আওতাধীন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের যত সাপ্লাই দরপত্র টেন্ডার একক ভাবে পেয়েছেন পিপলাই এন্টারপ্রাইজ, আহসান ব্রাদ্রাস, বাপ্পি ইন্টারন্যাশনাল, মুন্নি ট্রডার্স, এ সকল প্রতিষ্ঠানের মালিক একজনই এস কে পিপলাই (মরন বাবু)। যার সাথে জাহিদা আনোয়ার মুন্নির ছিল সু সম্পর্ক। যখন যে সিভিল সার্জন আসতো তাকে ম্যানেজ করেই চলত তাদের টেন্ডার বানিজ্য। অন্যান্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নানা অজুহাতে টেন্ডার বাতিল করে দিয়ে এস কে পিপলাই (মরন বাবু)'র এই প্রতিষ্ঠান গুলোকে কাজ পাইয়ে দিতেন জাহিদা আনোয়ার। যার কারনে অবৈধ্য ভাবে নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক এখন জাহিদা আনোয়ার মুন্নি।
এ বিষয়ে মেসার্স দীনা এন্টার প্রাইজের স্বাত্বাধীকারী সাইফুল আজম শাহিন বলেন, বিগত বছর গুলোতে কোন টেন্ডারেই অংশ নিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান সিভিল সার্জন থেকে কাজ পায়নী। একাধিক টেন্ডার বাতিল করে দেয়া হয়েছে তার। শুধু আমিই নই ঢাকার বড় বড় সাপ্লাইয়ার কম্পানীগুলোকেও বাতিল করে একছাটিয়া টেন্ডার এস কে পিপলাই (মরন বাবু) কে পাইয়ে দিয়েছে জাহিদা আনোয়ার মুন্নির এই সেন্ডিকেট। যার প্রমান সিভিল সার্জন কার্যালয়ের খাতা পত্রেই আছে।
সম্প্রতি তার এই দুরর্নীতির নানা চিত্র ফুটে ওঠায় এবং দুদকের হাত থেকে বাচঁতে তরিঘরি করে পদ শুণ্য না থাকার পরও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পদায়ন নিয়েছেন জাহিদা আনোয়ার। এখানেও অভিযোগ রয়েছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পদায়ন নিয়েছেন তিনি।
গত ৮ অক্টোবর শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদানের পর শুণ্য পদ না থাকায় তাকে হাসপাতালের আওতাধীন মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিকের হিসাব রক্ষক হিসেবে পদায়ন করেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর। কিন্তু জাহিদা আনোয়ার সেখানে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অফিস করেনী একদিনও। তবে দায়িত্বে না থাকলেও নিয়মিত হাজিরা দেন শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাব শাখায়।
সরজমিনে মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায় জাহিদা আনোয়ারের সকল কাজ করছেন উচ্চোমান সহকারী মো. বজলুর রহমান। তার সাথে কথা বলল্লে জানান এখন পর্যন্ত জাহিদা আনোয়ার অফিসে পা রাখেননি। তবে তার কাছে একটি পত্র পাঠিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক এই পর্যন্তই তিনি যানেন। কে জাহিদা আনোয়ার বা কেনই বা অফিসে আসেন না সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেন না তিনি।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডা. আবদুল মোনায়েম সাদ জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরিশাল সিভিল সার্জন অফিস থেকে জাহিদা আনোয়ার কে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলী করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে হাসপাতালে কোন হিসাব রক্ষকের পদ খালী না থাকায় তাকে মডেল ফ্যামিলি প্লানিং ক্লিনিকের হিসাব রক্ষক হিসেবে পদায়ন করেছেন পরিচালক ।
এদিকে মুন্নির সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। মুঠোফোনে দাবি করেন সব অভিযোগ মিথ্যে। তবে এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলার পর বেশ কয়েক জনকে দিয়ে তদবির করায় জাহিদা আনোয়ার।
এবিষয়ে বরিশাল সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম. মনজুর-এ-এলাহী বলেন, জাহিদা আনোয়ার স্বেচ্ছায় বদলি হয়েছেন। যদি তিনি অনিয়ম কিংবা দুর্নীতি করে থাকেন তাহলে দুদক সহ প্রশাসন আমার কাছে কোন তথ্য চাইলে অবশই দেব। তবে মুন্নির অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানায় সিভিল সার্জন।
অপর দিকে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেছেন, কর্মস্থলে অনিয়ম পেলে ছাড় নেই। সে যেই হোক। জাহিদা আনোয়ার বর্তমান কর্মস্থল থেক শের ই বাংলা মেডিকেলের প্রধান হিসাব শাখায় পদায়নে তদবির চালানোর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে পরিচালক বলেন, এখানে আসার কোন সুযোগ নেই তাছাড়া এখানে কোন পদ খালি নেই, কিংবা তার গ্রেডের সাথে এখানে পদায়নের কোন সুযোগ নেই।##
Comments