নীলফামারীতে প্রতিটি আসনে ধানের শীষের দূর্গে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে দাড়িপাল্লা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে নীলফামারী জেলায় রাজনীতির মাঠে চরম উত্তাপ বিরাজ করছে।দীর্ঘদিন ধরে নৌকা এবং জাতীয় পার্টি ও ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই জেলা।এবার নৌকা মার্কা নিষিদ্ধ এবং জাতীয় পার্টি স্বৈরাচার এর দোষর হওয়ায় প্রতিটি আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছে ধানের শীষের মার্কাটি।
দাড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থীরা এখন মাঠে নেমে গণসংযোগ,উঠান বৈঠক ও পথসভায় জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় ভোটারদের মাঝে তারা "ইনসাফের প্রতিক দাড়িপাল্লা,পরিবর্তনের রাজনীতি"রাস্তাঘাট জনকল্যাণমূলক কাজ এবং"জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফেরানোর"প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে,ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা অতীতের উন্নয়ন কার্যক্রম সংগঠনিক শক্তি ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের একনিষ্ঠ সমর্থনকে মূল হাতিয়ার হিসেবে ধরে রেখেছেন। তাদের বক্তব্য,এই জেলা শুধু একটি প্রতীকের নয়, এটি আমাদের আন্দোলনের ইতিহাসের প্রতীক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবার নীলফামারীর চারটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি, নীলফামারী জেলার চারটি আসনেই বইছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ভারতের সীমান্তঘেঁষা এ জেলার চারটি টি সংসদীয় আসনের ভোটের রাজনীতি এরই মধ্যে জমে উঠেছে। নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না হলেও ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। পাড়া-মহল্লায় এখন ভোটারদের আলোচনার প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে কে পাচ্ছেন কোন দলের টিকিট। ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ,চুলচেরা বিশ্লেষণ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নীলফামারী চারটি টি সংসদীয় আসনেই বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরমে। একাধিক গ্রুপে বিভক্ত বিএনপিতে ডজনখানেক প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে তৎপর। মনোনয়ন লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
এবং নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলের ৩১ দফা প্রচার করছেন জোরেশোরে। তারা নিয়মিত সামাজিক,সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত ঘোষনা করছেন,নীলফামারী ১ অধ্যক্ষ মাওলানা আঃ ছাত্তার।
নীলফামারী ২ এ্যাডভোকেট আল ফারুক আবদুল লতিফ। নীলফামারী ৩ মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফি। নীলফামারী ৪ হাফেজ মাওলানা মুনতাকিম বিল্লাহ মনোনয়ন
করে মাটে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা ফিরে পাওয়ায় দলের প্রচারেও ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ফলে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত নীলফামারী চারটি আসনে দলটির চ্যালেঞ্জ হবে জামায়াত। জেলার চারটি টি সংসদীয় আসনেই জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করায় একক প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে,প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও দেখেশুনে এগোচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা। এনসিপির নীলফামারী জেলার দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন,আমরা গুছিয়ে নিতে একটু সময় নিচ্ছি। অতি শীঘ্রই জেলার চারটি টি আসনে এনসিপির প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হতে পারে। তবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতো গতানুগতিক ধারায় প্রার্থী দেওয়া হবে না। এমন প্রার্থী বাছাই করা হবে, যারা জনবান্ধব হবে এবং নীলফামারী জেলার নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে উন্নয়নে কাজ করবে।
অন্যদিকে,গণঅধিকার পরিষদ থেকে নীলফামারী চারটি টি আসনের মধ্যে সদর আসনে ইতোমধ্যে দলের জেলা কমিটির সিনিয়র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। বাকি দুটি আসনে কারও নাম না জানা গেলেও চমক আছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। তবে প্রতিটি উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে তারা।
নীলফামারী ৩(জলঢাকা)।নীলফামারী চারটি আসনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা নীলফামারী ৩ (জলঢাকা) আসনে। পরিসংখ্যান বলছে,গত নির্বাচন গুলোতে দুই দুইবার জামায়াত ইসলামী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবং এইএলাকা জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা নামে অন্যান্য উপজলা গুলোর কাছে পরিচিত ।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছেন। এখানে ধানের শীষের টিকিট পেতে এখন পর্যন্ত তিন জনের নাম শোনা গেলেও বিগত সতেরো বছর থেকে মাঠে আছেন বলে শুনা যায় শুধু বিএনপির নেতা সৈয়দ আলী,ও কমেট চৌধুরী।
নির্বাচন উৎসব নিয়ে গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে শহরের হাটবাজার পর্যন্ত এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু "ধানের শীষ টিকবে, নাকি দাড়িপাল্লা ভাঙবে দূর্গের দেয়াল।
সবমিলিয়ে,নীলফামারীর রাজনীতিতে এখন উত্তেজনা চরমে। প্রতিটি আসনে দাড়িপাল্লার চ্যালেঞ্জ ধানের শীষের ঘাঁটিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি করছে, যা নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বহমান থাকবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
Comments