শতাধিক মৎস্যজীবীর জীবিকা অনিশ্চিত, উল্লাপাড়ায় নদী ইজারার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় স্থানীয় একটি মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে নদী ইজারা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে করে এলাকার শতাধিক মৎস্যজীবীর জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলার উধুনিয়া বাজারে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে গোহালা নদীর আড়াই কিলোমিটার শাখা খাল সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে ইজারা দেওয়া হয়। সর্বনিম্ন ৩৫ হাজার টাকা থেকে দর উঠতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় উধুনিয়া গ্রামের ইউসুফ আলী মোল্লা নদীটির ইজারা নেন। এর আগে উধুনিয়া বাজার জামে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে দরপত্রে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তবে অভিযোগ উঠেছে, জলমহাল ইজারা দেওয়ার নির্দিষ্ট নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষা করে মসজিদ কমিটি নদীর আড়াই কিলোমিটার অংশ ইজারা দিয়েছে। এতে করে অন্তত শতাধিক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী নদীতে মাছ ধরার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মসজিদ কমিটির নিয়ম অনুযায়ী বাংলা আশ্বিন মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত ইজারাদার ব্যতীত কেউ মাছ ধরতে পারবে না। ফলে জীবিকার তাগিদে স্থানীয় জেলেদের ইজারাদারের কাছে টাকা দিয়ে মাছ ধরতে হবে।
উধুনিয়া গ্রামের প্রবীণ মৎস্যজীবী আব্দুল মান্নান ফকির বলেন, তিনি গত ৪০ বছর ধরে এই নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এবার নদী ইজারা দেওয়ায় তাকে অন্তত ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ইজারাদারের কাছে জমা দিতে হবে, নইলে মাছ ধরতে দেওয়া হবে না।
একই অভিযোগ করেন স্থানীয় জেলে ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে গোহালা নদীতে মাছ ধরছি। কিন্তু এ বছর নদী ইজারা দেওয়ায় এখন ইজারাদারের অনুমতি ছাড়া মাছ ধরা যাবে না। এ এলাকায় শতাধিক পেশাদার ও অপেশাদার মৎস্যজীবী রয়েছেন, যাদের সবারই একই অবস্থা।
স্থানীয় দোকানদার সোহেল রানা জানান, মসজিদ কমিটি ইজারার জন্য মাইকিং করেছিল। পরে উধুনিয়া বাজারে সকলের উপস্থিতিতে দরপত্র অনুষ্ঠিত হয়, তিনি নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
ইজারাদার ইউসুফ আলী মোল্লা বলেন, সর্বোচ্চ দর ১ লাখ ৬২ হাজার টাকায় আমি আড়াই কিলোমিটার গোহালা নদীর ইজারা পেয়েছি। মসজিদ কমিটি ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতেই এটি সম্পন্ন হয়েছে।
উধুনিয়া জামে মসজিদের সহ-সভাপতি হাজি আব্দুল হামিদ জানান, মসজিদ উন্নয়নের তহবিল সংগ্রহের জন্য এ ইজারা দেওয়া হয়েছে। তবে ইজারা নেওয়ার পর অন্য কেউ চাইলেই মাছ ধরতে পারবে না।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, নদীতে মাছ ধরার জন্য কোনো মসজিদ কমিটির ইজারা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা রিমা বলেন, সরকারি জলমহাল ডিসেম্বর মাসে নিয়ম অনুযায়ী ইজারা দেওয়া হয়। কেউ চাইলেই নদী ইজারা দিতে পারে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত জানান, নদী সরকারি সম্পদ। কোনো ব্যক্তি বা কমিটি নদী ইজারা দিতে পারে না। যদি কেউ দিয়ে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Comments