রেমাক্রী ইউনিয়নের ৯০টি গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হাজারো মানুষ

দুর্গম প্রত্যান্ত এলাকায় গড়ে উঠা গ্রাম বড় মদক ভিতর পাড়া। দুর্গম থানচি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে রেমাক্রী ইউনিয়নের অবস্থান । এ গ্রামে যেতে নৌ পথে সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। গ্রামের পাশে বড় মদকের বাজার। গ্রামের প্রায় দেড়শত পরিবারে বসবাস ও জনসংখ্যা এক হাজারও বেশী। কিন্তু দূর্গম এই প্রত্যান্ত এলাকায় না আছে নেটওয়ার্ক না আছে বিদ্যুতের আলো। সেই সোলারে বাতি দিয়ে চলছে জীবনযাত্রা মান। অথচ স্বাধীনতা পর থেকে এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি স্বাস্থ্য সেবার মান। শুধু এই গ্রাম নয় আশেপাশে আরো ৯০টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ যেমন পাইনি কমিনিউটি ক্লিনিক ও এখনো পিছিয়ে রয়েছে আর্থ সামজিক উন্নয়ন থেকেও। যার কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকেও এখনো অধরায় রয়ে গেছে এসব প্রত্যান্তঞ্চলে গ্রামগুলো।
জানা গেছে, রেমাক্রী ইউনিয়নের প্রায় ৯০টির বেশী ছোট-বড় পাহাড়ি গ্রাম রয়েছে। সেসব গ্রামগুলো যাতায়াতের অনেক দুর্গম । বাসিরাম পাড়া, ছোটমদক, বড় মদক, যুগেরাম পাড়া, দলিয়ান পাড়া, ইয়াংরাইংসহ আরো কয়েকটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকায় এখনো স্বাস্থ্যের সেবা মান নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলে নানা জটিল কোন রোগে আক্রান্ত হলে মুহুর্ষ রোগীকে শহরে স্বাস্থ্য হাসপাতালে পৌঁছানো একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় সেখানকার বাসিন্দাদের। আশেপাশে ক্লিনিক না থাকায় দুর্গম পথ পেরিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে হয় উপজেলা শহরে। কিন্তু প্রায়৷ সময় নদীর মাঝপথে প্রাণ হারাতে হয়েছে অনেকজনকে। শুধু তাই নয় মুহুর্ষ রোগীকে কোন কোন সময় প্রাণ বাচাতে পারেনি বলে অভিযোগ করে এলাকার বাসিন্দারা।
সিভিল সার্জন কার্যালয় তথ্য মতে, দুর্গম এই থানচি উপজেলায় রেমাক্রী ইউনিয়নের একটি মাত্র কমিনিউটি ক্লিনিক রয়েছে। ছোট মদকে ক্লিনিক থাকলেও সেখানে ডাক্তার সংকটের কারণে এখনো চালু হয়নি। এছাড়া কোন ওয়ার্ডের এখনো কমিনিউটি ক্লিনিক চোখে দেখেননি দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা।
দুর্গম বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দুর্গমতার অজুহাতে যেখানে এখনো কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন হয়নি আর সেসব গ্রামে প্রতিদিনই চলছে স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাহাকার। ফলে দিনের পর দিন স্বাস্থ্যসেবা মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেখানকার প্রত্যান্ত অঞ্চলের মানুষ। শুধু স্বাস্থ্য সেবা নয় বিভিন্ন নানা মৌলিক অধিকার থেকেও পিছিয়ে রয়েছে এই অঞ্চলের পাহাড়ি পল্লীগুলো। তাছাড়া শহরে হাসপাতাল থাকলেও দূরত্বহীন, যা এখানকার সাধারণ মানুষের জন্য অপ্রতুল এবং প্রায়ই যাতায়াতের নানা সমস্যা মুখোমুখি হতে হয় । যার কারনে প্রায় সময় রোগীরা মারা যায় নদীর অর্ধেক পথে। প্রতিটি ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সেখানকার স্থানীয়রা।
রেমাক্রী ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য বলছে, বর্তমানে এই ইউনিয়নে মোট ৯০টির অধিক গ্রাম রয়েছে। সবমিলে জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজারো অধিক। কিন্ত দুর্গম এলাকা হওয়াতেই এখনো পৌছাতে পারেনি কমিনিউটি ক্লিনিক। ফলে বঞ্চিত আছে স্বাস্থ্যসেবার মান থেকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, থানচি শহর থেকে নৌ পথে তিনঘন্টা পর দেখা মিলে রেমাক্রী ইউনিয়ন। সেখানে পরিবার পরিকল্পনা অধীনে একটি ছোট ক্লিনিক রয়েছে। এটি পর থেকে আর কোন গ্রামে ক্লিনিক দেখা যায়নি। তাছাড়া শিশুদের যে ভিটামিন কিংবা প্রতিষেধক প্রতিরোধ ঔষধ দেয়ার কথা থাকলেও ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যসেবা অভাবে নানা রোগের্ব আক্রান্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরাও।
মহিলা ইউপি সদস্য বায়াতি ত্রিপুড়া বলেন, আশেপাশে কোন কমিনিউটি ক্লিনিক নাই। যার কারণে নদীর অর্ধেকে রোগী মারা যাচ্ছে। তাই প্রতিটি ওয়ার্ডের ক্লিনিক স্থাপন করে দিলে ভালো হত।
বড়মদক ভিতরপাড়া বাসিন্দা অংশৈহ্লা মারমা বলেন, আমরা ত দূর্গম এলাকায় থাকি।এখানে কোন নেটওয়ার্ক নাই,কারেন্ট নাই। আর চিকিৎসা নিতে থানচি শহরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক স্থাপনে দাবি জানাচ্ছি।
রেমাক্রী ইউপি চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা বলেন, আমার ইউনিয়নে ৯০ টি গ্রামে প্রায় জনসংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার অধিক। দুর্গমতা কারণে এখনো স্বাস্থ্যসেবা থেকে বিচ্ছিন্ন। যদি সরকার ক্লিনিক স্থাপন করে দিলে আমার ইউনিয়নের এলাকার মানুষ স্বাস্থ্য থেকে বঞ্চিত হবে না বলে আশা রাখি।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, দূর্গম ও জনবসতি কম হলেও সেখানে ক্লিনিক চাহিদা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি সেখানে প্রতিটি ওয়ার্ডের কমিনিউটি ক্লিনিক স্থাপন করে সেখানে স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করা।
জেলা পরিষদে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, যেখানে ক্লিনিক প্রয়োজন সেখানে সিভিল কার্যলয় থেকে চাহিদা পাঠালে পার্বত্য মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠাবো। আর যেখানে প্রয়োজন সেখানে ক্লিনিক স্থাপন করার আশ্বাস দেন তিনি।
Comments