হাত বদলেই বাড়ছে চাঁদপুরের ইলিশের দাম

পদ্মা-মেঘনার চাঁদপুরের ইলিশের স্বাদের খ্যাতি ও চাহিদা থাকায় নদী থেকে মাছ ধরা থেকে বাজারে বিক্রিকালে বেশ কয়েকবারের হাত বদলে দাম বাড়ছে। যদিও জেলে ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাগর থেকে নানা কারনে ইলিশ নদীতে পর্যাপ্তভাবে আসতে না পারায় সীমিত ধরা পরাতেই দাম আকাশচুম্বী। তবে চাঁদপুরের মৎস্যসমিতির নেতা বলছেন, প্রাকৃতিক মাছ ইলিশ সামনের সিজনেই দাম কিছুটা কমবে।
৮ সেপ্টেম্বর সোমবার চরভৈরবী ও বড়ষ্টেশন মাছঘাট ঘুরে ইলিশের দাম আকাশচুম্বী নিয়ে নানা মন্তব্য পাওয়া যায়।
গণমাধ্যমকর্মী ফারুকুল ইসলাম জানান, চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী হতে মতলব উত্তরের ষাটনল পর্যন্ত মেঘনা ও পদ্মা নদীর প্রায় ৭০ কিলোমিটার নৌপথ এলাকাকে ইলিশের অভয়ারণ্য বলা হয়। কিন্তু ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও যেনো এ মাছটি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কম দামে বাজারে মিলছে না। দিনের পর দিন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়েই যেনো সুস্বাদু খেতে হওয়ায় এই ইলিশ মাছটির দাম ক্রেতা সাধারণের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। তবে নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়া নিয়ে নানা মন্তব্য জেলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের।
জেলে কাদির বলেন, সাগর থেকে ইলিশ নদীতে ডুবচরসহ নানা কারনে আসতে পারছে না। তারমধ্যে ইলিশ প্রবেশের স্থানের নদীর পানি দূষিত হওয়ায় এখানে মাছগুলোর ছাড়া ডিম নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও ২/৩টা বা আকারে ছোট সাইজের হাতেগোনা কিছু ইলিশ পাই, আবার কখনও পাইও না। এতে করে নিজেদের শ্রমের পারিশ্রমিকের মূল্য, ট্রলারের তেলের মূল্য, জালের মূল্য কিছুই হিসাবে মিলাতে পারিনা। তাই অল্প ইলিশ পেলেও দাম বেড়ে যাচ্ছে।
পাইকার জব্বার বেপারী বলেন, জেলেদের থেকে ইলিশ টা আসার পর প্রতি ঘাটে ইলিশের দামের সাথে বেশ কিছু অতিরিক্ত মূল্য যোগ হয়। এরমধ্যে পরিবহন খরছ ও কমিশনও রয়েছে। তাই জেলে থেকে আড়তদার, আড়তদার থেকে পাইকার, পাইকার হতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা বড় বাজার অর্থাৎ এভাবেই স্থান ও দূরত্ব অনুযায়ী ইলিশের দাম বাড়তে থাকে।
আড়তদার জয়নাল বলেন, মাছটা ঘাটে আসলে বেশ কিছু খরছ এটা বিক্রিকালে যোগ করতে হয়। তারমধ্যে ঘাটেরও একটা ট্যাক্স আছে। তাই মাছ কম হওয়ায় খরছ পুষিয়ে নিতেই দাম বেড়ে যায় ইলিশের।
তবে ক্রেতারা বলছেন, ইলিশের দাম বাড়ার পেছনে বেশ কয়েকবার হাত বদলই শুধু নয়। বরং একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটও রয়েছে। যারা বাজারে কৃত্রিম ইলিশ সংকট দেখিয়ে দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আর এজন্যই ইলিশ সাধারণ ক্রেতারা খেতে পারছেনা।
চাঁদপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, সারাদেশে ইলিশের মূল্য এক হওয়া সম্ভব নয়। কারন এটি কাঁচামালের মতো। তাই দাম উঠানামা করবেই। তবে সিজন বদলালে নদীতে প্রচুর ইলিশ জেলের জালে ধরা পড়লে দাম কেজি প্রতি কমবে বলে বিশ্বাস করি। তাছাড়া ইলিশ নানা স্থানে পাওয়া গেলেও চাঁদপুরের পদ্মার ইলিশের চাহিদা বাজারগুলোতে ব্যাপক। তাই তেল জাল ও পরিবহন খরছ কমাতে কার্যত পরিকল্পিত পদক্ষেপেই পারে ইলিশের দাম গ্রাহকের সাধ্যের মধ্যে আনতে।
তিনি আরও বলেন, নদীর ডুবোচর ও নাব্যতা সঙ্কটে ইলিশ চলাচলে বিগ্নতা হচ্ছে। তাই বড় সাইজের চেয়ে বর্তমানে বাজারে ৩-৪শ' গ্রামের ইলিশটা বেশি। যেগুলো ৪টায় কেজি হয় সেগুলোর মণ ২৪/২৫ হাজার টাকা করে। ৩টায় কেজি হলে মণ ৩৫ হাজার টাকা। ১ কেজি ওজনের টার মণ ৯০ হাজার টাকা পাইকারী অর্থাৎ ২২৫০ টাকা কেজি। ৮শ' গ্রামের ইলিশ ১৫-১৬শ' টাকা কেজি। তবে সামনে সিজন বদলালে ইলিশের দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
Comments