যমুনার চরের শুধু ঘাস বেচেই পেট বাঁচায় শতাধিক পরিবার!

যমুনা গর্ভে চলে বাড়ী-ঘর, নেই কোন আবাদী জমি। শরীরে বল থাকায় শ্রম বিক্রি করাই তার নিত্যদিনের সাথী। বৃষ্টি-বাদল আর আবাদীর সংখ্যা কমতে থাকায় নদী থেকে মাছ ধরে বিক্রি করা তার প্রধান পেশায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে নদীর অথৈ পানিতে উত্তাল থাকায় মাছ ধরা সহজ না তার কাছে। তাই তিনি বতর্মানে যমুনার চরের ঘাস বিক্রি শুরু করেন।
আর এ থেকে আয়েই সংসার চালায়। কথাগুলো শুনছিলাম বগুড়ার ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে আশ্রিত শহিদুল ইসলামে কাছ থেকে। যমুনার চরগুলোতে প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিকভাবে ঘাসের জন্ম হয়। এবং বাড়ন্ত হলে শুধু শহিদুল একা নয়, তার মতো বাস্তুহারা শতাধিক পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত ঘাস সংগ্রহ করেন। এবং ঘাসগুলো কেটে এনে বাজারে বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের পেটে অন্ন ও পরনে বস্ত্রের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যদির জোগান দিয়ে আসছে।
এক সময় ওদের গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ ছিল। ছিল অনেক জায়গা-জমি। অভাব শব্দটি ছিল ওদের কাছে অনুপস্থিত। যমুনার টাটকা মাছ, আবাদের শাক-সবজি আর গাভীর খাঁটি দুধের সঙ্গে চিকন চালের ভাত খেয়ে ওরা অভ্যস্ত ছিল। কিন্ত রাক্ষুসী যমুনা ওদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। বাস্তুহারা মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বাঁধে।
সংসার চালানোর জন্য পুরোনো পেশা বদলে ওরা নতুন পেশা বেছে নিয়েছে। অভাবের সংসারে দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জন্য ছেলে-বুড়ো এমনকি আদরের ছোট ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে শ্রম বিক্রি। পাশাপাশি যমুনার চর থেকে সংগৃহিত ঘাস হাট-বাজারে বিক্রির টাকায় ওদের সংসার চলে।
প্রতিদিন কাঁক ডাঁকা ভোরে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চর থেকে সবুজ ঘাস নিয়ে উপজেলার শহড়াবাড়ি বাঁধে ঘাসের হাটে আসেন ঘাস বিক্রেতারা। সেই ঘাস কিনে নেন কৃষক, গৃহস্থ, গরুর খামারিসহ বিভিন্ন শ্রেণির লোকজন। প্রতিদিন দুপুর পর্যন্ত ঘাস সংগ্রহ করে হাটে বিক্রি করে চাল, ডাল, নুন, তেল নিয়ে তারা বাড়ি ফেরেন। শহড়াবাড়ি বাঁধে ঘাসের হাট বসে প্রতিদিন দুপুরে।
এক সময়ের প্রতাপশালী গৃহস্থ শহড়াবাড়ি গ্রামের নাদু মিয়া জানায়, দেড় যুগ আগে তার সোনায় মোড়ানো সংসার ছিল। তিনজন বছরশাইল কাজের লোক ছিল। এক বছরে তার সব জমি যমুনার পেটে যায়। লেখাপড়া করেনি বলে নতুন কর্মসংস্থান করতে পারেনি। আজ তিনি নিঃস্ব।
নিজে এখন শ্রম বিক্রি ও ঘাসুড়ে হয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ জোগাচ্ছেন। ক্ষেত-খামারে তেমন কাজ না থাকায় যমুনার চর থেকে ঘাস কেটে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঘাসের একেকটি আটির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা। পুঁজি ছাড়াই তিনি প্রতিদিন ঘাস বেঁচে আয় করেন ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।
ঘাস বেচাকেনা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। ওই এলাকার ছোট খামারি আব্দুর রহিম বলেন, গরুকে কুঁড়া ভূষির সঙ্গে কিছু তাজা ঘাস খাওয়াতে হয়। তাই প্রতিদিন সকালেই এই হাট থেকে ঘাস কিনতে আসেন। এখানে চরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কাঁচা ঘাস পাওয়া য়ায়।
Comments