সাদাপাথর কেলেঙ্কারিতে জড়িত কেউই ছাড় পাবে না: জনপ্রশাসন সচিব

সাদাপাথর লুটপাটের সঙ্গে যারাই জড়িত, সে যত বড় দলের কিংবা প্রশাসনেরই হোক না কেন— কেউই ছাড় পাবে না। কাউকেই আইনের বাইরে রাখা হবে না। শুক্রবার সকালে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।
তিনি বলেন, সাদাপাথরসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে বিশেষ প্যাকেজ কর্মসূচি নেওয়া হবে। পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে সাদাপাথর এলাকা।
শুক্রবার সকালে জনপ্রশাসন সচিবের নেতৃত্বে সাদাপাথর পরিদর্শনে যায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি। এসময় খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলমসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। তারা সাদাপাথর ঘুরে দেখেন এবং সেখানকার স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন।
এদিকে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, লুট হওয়া পাথর ফিরিয়ে আনার কাজ চলছে, প্রতিস্থাপনও করা হচ্ছে। হয়তো আগের মতো পুরো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরবে না, তবে আগের অবস্থায় ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, সাদাপাথরসহ সব পর্যটনকেন্দ্রের প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে।
গত ২০ আগস্ট সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের ঘটনায় মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ পাঁচ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে বলা হয়- সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পর্যটন স্পট ও রেলওয়ে বাংকার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ ও পর্যটন স্থানের নান্দনিকতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেয় সরকার। অফিস আদেশে আরও বলা হয়, প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
এদিকে, সাদাপাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আছেন। এ ছাড়া লুটাপাটে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা ও সহযোগিতা ছিল। সাদাপাথর এলাকায় এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালিয়ে দুদক এসব তথ্য জানতে পেরেছে। গত ১৩ আগস্ট দুদক সিলেটের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল এ অভিযান চালায়। পরে অভিযানে পাওয়া যাবতীয় তথ্য প্রতিবেদন আকারে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এছাড়াও পাথর লুটপাটে ১৩৭ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে জেলা প্রশাসন ঘটিত তদন্ত কমিটি। সেইসাথে লুটপাট বন্ধে ১০ টি সুপারিশ করা করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে ৭ পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) পদ্মাসন সিংহ। প্রতিবেদনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এবং সংলগ্ন রেলওয়ে বাঙ্কারে ভয়াবহ লুটপাট চলে আসছে। প্রথমে রাতের আঁধারে হলেও পরে দিনের আলোতেও প্রকাশ্যে এই লুট চলে। স্থানীয়দের দাবি, এ পর্যন্ত অন্তত দুই কোটি ঘনফুট পাথর লুট হয়েছে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য ২০০ কোটির বেশি।
Comments