বয়স্ক ও অন্তঃসত্ত্বা ভাতার টাকা নিয়ে প্রতারণা

নওগাঁর মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে বয়স্কভাতা ও সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত অন্যান্য ভাতা আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। ভাতাভোগী এক অসহায় বৃদ্ধের নামে দীর্ঘ তিন বছর ধরে বরাদ্দ করা ভাতার টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করছেন স্থানীয় এক নারী ইউপি সদস্য।
ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য সান্তনা রানীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীর নাম মোঃ হবিবর খাঁন। তিনি মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা। হবিবর খাঁনের অভিযোগ, সরকার প্রদত্ত তার বয়স্কভাতা নিয়মিত পাওয়ার কথা থাকলেও, ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য শ্রীমতি শান্তনা রানী (স্বামী- নিমাই, গ্রাম- রুয়াই, মান্দা, নওগাঁ) গত প্রায় তিন বছর ধরে তার ভাতার টাকা গোপনে উত্তোলন করে আসছেন।
অভিযোগকারীর দাবি, ইউপি সদস্য শান্তনা রানী নিজের মোবাইল নম্বর (০১৭৭৪৩০৫১৪৩) ব্যবহার করে নগদ অ্যাকাউন্টে নিয়মিতভাবে তার ভাতার টাকা তুলে নিচ্ছেন। বিষয়টি জানার পর একাধিকবার সরাসরি অভিযোগ জানালেও তিনি টাকা ফেরত দেননি বরং প্রতিবারই অস্বীকার করেছেন বলে জানান হবিবর খাঁন।
তিনি আরও জানান, স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। ফলে তিনি ৯নং তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
সরেজমিনে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অন্যান্য ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে এবং ওই নগদ অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দেখে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।
এসময় ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগী মোঃ হবিবর খাঁন বলেন, "আমি একজন বয়স্ক ও অসহায় মানুষ। আমার ভাতার টাকা কেড়ে নেওয়া মানে আমার জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে যাওয়া। আমি প্রশাসনের কাছে জোরালোভাবে অনুরোধ জানাই, যাতে আমার পাওনা টাকা ফিরিয়ে পাই এবং ভবিষ্যতে আর কেউ এভাবে প্রতারণা করতে না পারে।"
এতেই থেমে নেই অভিযোগ। ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেনের ১৪ মে ২০২৩ সালে স্বাক্ষরিত ভাতাভোগীর তালিকায় দেখা যায়, ইউপি সদস্য সান্তনা রানী তার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবিবাহিত মেয়ে যুথী রাণীকে গর্ভবতী দেখিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য বরাদ্দ করা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে।
এছাড়া কাঞ্চনপুর গ্রামের খেলুরাম প্রামানিকের ছেলে শ্রী অনিল চন্দ্র প্রামানিকসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, সান্তনা রানী বয়স্কভাতার কার্ড করে দেওয়ার নাম করে প্রতি জনের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে গ্রহণ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য শান্তনা রানীর "আমি ভুল করে এসব করেছি। ভবিষ্যতে আর কখনো করব না। হবিবরের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তার সব টাকা আমি ফেরত দিয়ে দেব।"
অপর এক প্রশ্নে শান্তনা রাণী বলেন, 'আমার মেয়ে যুথী রাণী অবিবাহিতা-কুমারী। অন্তঃসত্ত্বা ভাতায় স্বামীর নামের যায়গায় দেওয়া চন্দ্র সাহা নামে বাস্তবে কোন লোক নেই। সব তথ্যই ভূয়া।'
তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এস. এম. মখলেছুর রহমান বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ জুলাই ৩নং ও ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আঃ জলিল ও মোঃ আঃ কাদের ৪, ৫, ৬নং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড সদস্য মোছাঃ লাইলি খাতুন এবং ইউপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ নাজমুল হোসাইনের সমন্বয়ে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ ও যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
Comments