যানজট ও অব্যাবস্থাপনায় জর্জরিত কুমিল্লা শাসনগাছা বাস টার্মিনাল জনভোগান্তি চরমে

যানজট ও অব্যাবস্থাপনায় জর্জরিত কুমিল্লা শাসনগাছা বাস টার্মিনাল জনভোগান্তি চরমে
কুমিল্লার অন্যতম ব্যস্ততম যাত্রী পরিবহন কেন্দ্র শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এখন নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। জেলার দাউদকান্দি, হোমনা, মেঘনা, তিতাস, চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচংসহ ৯টি উপজেলার বাস চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু এই টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন অসংখ্য বাস ছাড়ে। এছাড়াও ঢাকা, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী বাসগুলো এখান থেকে যাতায়াত করে।
কিন্তু টার্মিনালে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন প্রবেশ, ফ্লাইওভারের নিচে হকারদের অবৈধ দখলদারি, এবং সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশার অতিরিক্ত চাপের ফলে এলাকাজুড়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি, বাসস্ট্যান্ডজুড়ে খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট জনভোগান্তি চরমে পৌছেছে। ফলে টার্মিনালটি ক্রমেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে।
ধারণক্ষমতার বাইরে বাস পার্কিং
বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা প্রায় ১৫০টি বাস পার্কিংয়ের। কিন্তু বাস্তবে এখানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০টির বেশি বাস পার্কিং করা হয়। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে টার্মিনালে যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছাড়তে না পারায় যাত্রীরাও পড়ছেন চরম বিড়ম্বনায়।
হকারদের দখলে রাস্তা
গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেইসকোর্স থেকে শাসনগাছাগামী রোডটি বাদসা মিয়ার বাজার পর্যন্ত কার্যত অচল। রেল গেইট থেকে টার্মিনাল পর্যন্ত অংশজুড়ে হকারদের দখলে রাস্তা, যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানো এবং নির্ধারিত স্টপেজের বাইরে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা—এসবই যানজটের মূল কারণ। এশিয়া লাইন ও তিশা পরিবহনের মতো কিছু বাস নির্ধারিত সময় ছাড়াও দীর্ঘ সময় রাস্তা দখল করে রাখে। টার্মিনালের ওপর দিয়ে নির্মিত ফ্লাইওভারটিও যানবাহনের গতিশীলতায় প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
টার্মিনালের মাঠের দুরবস্থা
টার্মিনাল মাঠের অবস্থা আরও করুণ। বেশিরভাগ স্থানে রয়েছে গভীর গর্ত। কোথাও সমতল ভূমি নেই। বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে চলাচল আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। বাসচালক ও হেলপারদের অভিযোগ, গর্তে বাস চলতে গিয়ে প্রায়ই বাস হেলে পড়ে, যাত্রী ও চালক-সবার জন্যই এটি বিপজ্জনক।
সুগন্ধা পরিবহনের এক চালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "একটু বৃষ্টি হলেই পুরো মাঠে পানি আর কাদা জমে যায়। এতে গাড়ি চালানো ভয়াবহ কষ্টকর হয়ে পড়ে।"
নিয়মিত যাত্রী নাজমুল বলেন, "এই রোডে সবসময়ই জ্যাম লেগে থাকে। হকারদের দখলদারি আর যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানো বন্ধ না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।" তিনি দ্রুত টার্মিনাল সংস্কারের দাবি জানান।
কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির সভাপতি কবির হোসেন জানান, "টার্মিনালটি আলেখারচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ আগে থেকেই রয়েছে। জাইকার প্রতিনিধিরাও স্থান পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।" তিনি বলেন, "শাসনগাছা টার্মিনালের বর্তমান মাঠটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে, দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন।"
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈনুদ্দিন চিশতি বলেন, "এই বছরের শুরুর দিকে জাইকার অর্থায়নে টার্মিনাল স্থানান্তর ও জমি অধিগ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই পরবর্তী কাজ শুরু হবে। তবে এটি সময়সাপেক্ষ বিষয় বলে জানান। আর টার্মিনাল সংস্কারের বিষয়টি জেলা পরিষদের আওতাধীন বলেও তিনি জানান।"
Comments