বিসিসির বিরুদ্ধে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জমি দখলের অভিযোগ

ঐতিহ্যবাহি বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (মুসলিম ইনস্টিটিউট) ও মাঠ রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। বুধবার বেলা সাড়ে ১১ টায় সহ সর্বস্তরের রাজনীতিবিদ ও জনগণের ব্যানারে বরিশাল প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে- বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) কর্তৃক অবৈধভাবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জমি জবর দখল করে রেখেছে। তবে জমির মালিকানা দাবি করলেও এর পক্ষে কোনো দলিলপত্র দেখাতে পারেননি ক্লাব কর্মকর্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বরিশাল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবায়দুল হক চান লিখিত বক্তব্যে ক্লাবের ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ শাসনামলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি বরিশাল শহরে অবিভক্ত বাংলার জাতীয় জাগরণের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৩৭ সালে বরিশালের জমিদার সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শহরের শিক্ষা সাংস্কৃতি ও খেলাধূলা অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বরিশাল মৌজায় ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন।
১৯৪২ সালে তাঁরই পুত্র সৈয়দ ফজলে রাব্বির আনুকূলে শহরের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার মিলে এই স্থানে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি বিভিন্ন খেলাধুলা কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। পরবর্তীতে জমির সি.এস পর্চা ও দলিল সূত্রে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী উক্ত ৩৩শতাংশ জমি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারির অনুকূলে বি,এস পর্চা ভূক্ত হয়।
তিনি জানান, মুসলিম ইনিস্টিটিউটের অনুকূলে এস,এ/আর,এস অনুযায়ি জমি পরিচিতি: বরিশাল মৌজা-৪৯ এর ৩০৪ নং খতিয়ানের ১৩৮/৮৮১নং দাগে ৩৩০ শতাংশ জমি এবং বিএস জরিপে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সেক্রেটারির অনুকূলে বরিশাল মৌজা-৪৯ এর খতিয়ান ১৮৩১ (ডিপি-২৯) ১৮৪৩ ও ১৮৪৫ দাগে ৩৩০০ সন্ত্রাংশ জমি নিজস্ব অধিকার ভুক্ত।
সংবাদ সম্মেলনে চাঁন আরো বলেন, ইতিহাসের প্রথম দিকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটি মুসলিম ছেলে-মেয়েদের স্বার্থে পরিচালিত হলেও তা অচিরেই সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সার্বজনীন খেলাধুলার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ব্রিটিশ থেকে পাকিস্তান আমলসহ বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী বরিশালের ক্রীড়া অংঙ্গণে এই ক্লাবটির অবদান অপরিসীম।
কিন্তু ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি গভীর রাতে বরিশালের ঐতিহ্যবাহি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবটিকে গুড়িয়ে দেয় বরিশাল সিটি করপোরেশনের তৎকালিন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ওই সময় সকল দলিলপত্র আসবাবপত্র লুট করে নেয়।
তিনি বলেন, ক্লাব ও মাঠ ফিরে পাবার জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরাচারের দোসরা আমাদের জমি ফিরিয়ে দেয়নি। ৫ আগস্টের পরেই ওই জমি জেলা প্রশাসক আমাদের বুঝিয়ে দেয়। আমরা সেখানে সীমানা প্রাচীর দেই। কিন্তু বর্তমান বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে জব্দ করেছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জমি উদ্ধারের জন্য সিটি করপোশনের প্রশাসকের কাছে গেলে তিনি আমাদের সাথে অসধাচরন করেন।
বর্তমানে ওই জমিতে সিটি করপোকশন তাদের গাড়ি পার্কিংয়ের গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহার করছে। ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের জমি ফিরিয়ে না দিলে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন এবায়দুল হক চাঁন।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আলম ফরিদ, বাসদ নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী, নজরুল হক নিলু, দুলাল মল্লিক, হাফিজুর রহমান হীরাসহ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব রক্ষা কমিটির সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৪ জুলাই বরিশাল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের উপস্থিতিতে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে বিরোধপূর্ণ জমি পরিমাপ করে ২২ শতাংশ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেয় গণপূর্ত বিভাগ। এর একদিন পর ১৫ জুলাই বেলা ১২টার দিকে সেই জমি পুনরায় দখলে নেয় সিটি করপোরেশন। জমিতে থাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের তারকাঁটা ও বাঁশের বেড়া খুলে নেয় তারা।
এ প্রসঙ্গে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব কর্মকর্তারা ওই জমিটিতে তাদের বলে দাবি করছে। কিন্তু ক্লাবের অনুকূলে কোন প্রকার কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তারা। জমিটি মুসলিম ইনস্টিটিউটের নামে। যার এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই সরকারি সম্পত্তি হিসেবে সিটি করপোরেশন সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে দখলমুক্ত করা হয়েছে।
Comments