চট্টগ্রামে ঘরে ঘরে জ্বরের রোগী, অনেকেই ভুগছেন ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ায়

তেরো বছরের কুশল বড়ুয়া জ্বরে আক্রান্ত প্রায় তিন দিন যাবত। স্বাভাবিক সময়ের জ্বরের মতো না এই জ্বর! প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছে সে। তিন-চার ঘণ্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ১০৫ ডিগ্রিতে। চিকিৎসক কয়েক ধরনের ওষুধ দিলেও কমছিল না জ্বর। শেষ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক দেন। তবে পাঁচ দিন পর একটু সুস্থ হয় কুশল। কিন্তু এরই মধ্যে আক্রান্ত হয় বড় বোন সুমিতা বুড়ায়া। দুই সন্তানকে সুস্থ করতে গিয়ে এখন শীরের জ্বর নিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন মাও! তাদের তিন জনের রক্ত পরীক্ষায় একজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এত অল্প সময়ে এই পরিবারের সব সদস্য অতীতে কখনও এভাবে আক্রান্ত হননি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে তাদের।
এমনই করুণ অবস্থা শুধু চট্টগ্রামের হেমসেন লেনের এই পরিবারটিরই নয়, জ্বরে কাবু হচ্ছে অনেক পরিবারের একাধিক সদস্য। কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসকদের চেম্বার এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে জ্বরের রোগী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ৮০ ভাগই জ্বরে আক্রান্ত। অনেকেই ভুগছেন ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ায়। চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের মতো জ্বরের এত রোগী অতীতে কোনো বছর পাওয়া যায়নি। পরিবারের একজন সেরে উঠতে না উঠতেই আক্রান্ত হচ্ছে আরেকজন।অনেকের জ্বর আসার কয়েকদিনের মধ্যে দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা, সর্দি, কাশিসহ নানা জটিলতা।
বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে নারী-পুরুষের র্দীঘ লাইন। অনেকের কোলে শিশু। বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে টিকিট কাটার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন তারা। লাইনে থাকা বেশির ভাগ রোগী জ্বরে আক্রান্ত। হাসপাতালের নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ডাক্তারের প্রতিটি কক্ষের সামনে লাইন ধরে দাঁড়ানো রোগী।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এএসএম লুৎফুল কবির (শিমুল) বলেন, 'আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে জ্বরের রোগী। বহির্বিভাগে আসা প্রতি ১শ রোগীর মধ্যে ৮০ জনই জ্বরে আক্রান্ত। বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। আক্রান্তদের অনেকের ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হচ্ছে।' লুৎফুল কবিরের পাশেই একের পর এক রোগী দেখছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এইচএম হামিদুল্লাহ মেহেদী। তিনি সমকালকে বলেন, চাপ বেড়ে যাওয়ায় সকাল থেকেই অনবরত রোগী দেখতে হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি জ্বরের রোগী বাড়ছে বেসরকারি হাসপাতালেও। চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের একাধিক মেডিসিন ও শিশু বিশেষজ্ঞ জানান, কয়েকদিন ধরে চেম্বারে আসা রোগীদের চার ভাগের তিন ভাগই জ্বরে আক্রান্ত।
শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, 'অনেকেই আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে ছুটে আসছেন। এমন অনেক অভিভাবক পাচ্ছি, যারা নিজেরাও জ্বরে আক্রান্ত। উদ্বেগের বিষয় হলো, বেশির ভাগের শরীরে তাপমাত্রা ১০৫ থেকে ১০৬ ডিগ্রি।'
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, 'জ্বরের রোগী হয়েছে কয়েক গুণ। জটিল রোগীদের অনেককে ভর্তি করা হচ্ছে।'
সিভিল সার্জন ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'শহরের পাশাপাশি জ্বরের প্রকোপ গ্রামেও। অনেকের তীব্র জ্বর, শরীর ব্যথা, দুর্বলতা। এ পরিস্থিতিতে মশা নিধন ও চারপাশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি হয়ে পড়েছে।'
Comments