উন্নয়ন ব্যয়ে ধীর গতি: প্রশাসনিক অচলাবস্থার মূল্য দিচ্ছে অর্থনীতি
ঢাকা জার্নাল রিপোর্ট
উন্নয়নই যে কোনো সরকারের প্রধান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকার। কিন্তু বাস্তবতা বলছে,সেই অঙ্গীকার আজ কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারের উন্নয়ন ব্যয়ের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা নিছক পরিসংখ্যান নয়, এটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার গভীর সংকটের প্রতিফলন।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে এডিপির মাত্র ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে ব্যয় ছিল ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এই ব্যয় কমে যাওয়ার অর্থ হলো- উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কার্যত এগোচ্ছে না। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গতি হারাচ্ছে।
সরকারি তহবিল, বৈদেশিক সহায়তা ও সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন, উন্নয়ন ব্যয়ের তিনটি প্রধান উৎসেই মন্থরতা লক্ষণীয়। প্রশ্ন উঠছে,অর্থের ঘাটতি কি মূল সমস্যা? নাকি সমস্যার শিকড় আরও গভীরে? বাস্তবতা হলো,রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা,প্রশাসনিক দ্বিধা এবং মাঠপর্যায়ে কার্যকর নেতৃত্বের অভাবই উন্নয়ন ব্যয়ের এই স্থবিরতার মূল কারণ।
সরকার পরিবর্তনের পর দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনে যে সিদ্ধান্তহীনতা ও গতিহীনতা তৈরি হয়েছে তা এখন আর অজুহাত দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। ফাইল আটকে থাকা,দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং দায়িত্ব এড়ানোর সংস্কৃতি প্রকল্প বাস্তবায়নকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে। এর ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ। বিলম্বিত অবকাঠামো,থেমে থাকা সেবা ও অনিশ্চিত কর্মসংস্থানের ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে, সরকারেও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
এই স্থবিরতা যদি কেবল কয়েক মাসের হতো,তবে সেটিকে মৌসুমি ধীরগতি বলে এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি প্রমাণ করে, সমস্যাটি কাঠামোগত। বড় বাজেট ও বড় এডিপি দিয়ে উন্নয়নের গল্প শোনানো হলেও বাস্তবায়নের সক্ষমতা ক্রমেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।
উন্নয়ন ব্যয়ের এই মন্থরতা শুধু আর্থিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতা নয়;এটি সরকারের নীতিগত দৃঢ়তার পরীক্ষাও। সময়মতো সিদ্ধান্ত, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং মাঠপর্যায়ে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া উন্নয়ন কখনোই গতি পায় না। এখনই যদি এই অচলাবস্থা ভাঙার উদ্যোগ না নেওয়া হয়,তবে উন্নয়নের স্থবিরতা খুব দ্রুতই অর্থনৈতিক স্থবিরতায় রূপ নিতে পারে,যার দায় এড়ানোর সুযোগ আর কারও থাকবে না।
Comments