রাষ্ট্র কি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের জুলুম সহ্য করবে, নাকি ভোক্তার পাশে দাঁড়াবে?
ঘোষণা ছাড়া নীরবে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করল - বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই, তদারকিও কার্যকর নেই। আমদানিকারক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক লাফে লিটারে ৯ টাকা বাড়িয়েছে, অথচ এর আগাম বার্তা নেই, নেই সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন। ভোক্তা পর্যায়ে এটি নিছক মূল্যবৃদ্ধি নয় -এ এক ধরনের জুলুম।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন দাবি করছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে, তাই সরকারকে জানিয়েই তারা দাম সমন্বয় করেছে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য একেবারেই উল্টো । মন্ত্রণালয় বলছে ব্যবসায়ীরা আবেদন করলেও অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন হলো, অনুমতি ছাড়াই কীভাবে বাজারে নতুন দামের বোতল চলে এলো? অনুমোদনহীন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার মানে কি আইনেরই অবমাননা নয়?
আইন খুব স্পষ্ট। ২০১১ সালের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ বলছে, দাম বাড়াতে হলে ১৫ দিন আগে মনিটরিং সেল, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। এর উদ্দেশ্য - ভোক্তাকে সুরক্ষা দেওয়া, অসম আচরণ ঠেকানো। কিন্তু ব্যবসায়ীরা যে পদ্ধতিতে দাম বাড়িয়েছে, তা আইন মানার বদলে আইনের ফাঁকফোকর খোঁজারই নামান্তর।
একদিকে পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬৫ টাকা, অন্যদিকে প্রতি লিটার ১৯৮ টাকার নতুন দাম -কাগজে-কলমে এসব ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে ভোক্তার কাঁধেই চাপছে সমস্ত বোঝা। যাদের দৈনিক নিত্যপ্রয়োজনে তেল লাগে, তাদের জন্য এ বাড়তি চাপ অমানবিক। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব-এর বক্তব্য যথার্থ -সরকারের অনুমতি ছাড়া বাড়তি অর্থ আদায় অবশ্যই অন্যায়।
এখানে স্পষ্ট যে ব্যবসায়ীরা 'বিশ্ববাজার'কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ বহুবার দেখা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশে দাম কমতে সময় লাগে, আবার কখনো কমেই না। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভোক্তার প্রতি দায়বদ্ধতার কোনো চিহ্ন নেই।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো -সরকার এখনও বলছে, তারা অনুমতি দেয়নি। তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? ব্যবসায়ীরা চাইলে যে কোনো সময় দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন? এ ধারণা যদি সত্যি হয়, তবে নীতিমালা থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা -সবকিছুই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
সরকারের উচিত বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করা, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি।
আইন আছে, প্রতিষ্ঠান আছে -কিন্তু ভোক্তার সুরক্ষা কোথায়? ব্যবসায়ীদের এই কৌশলী মূল্যবৃদ্ধি শুধু অনৈতিকই নয়, এটি বাজারে এক ধরনের 'সাইলেন্ট সিন্ডিকেট' তৈরির ইঙ্গিতও দেয়। এখন প্রশ্ন -রাষ্ট্র কি এ জুলুম সহ্য করবে, নাকি ভোক্তার পাশে দাঁড়াবে?
Comments