আমেরিকা গোপনে পাকিস্তানকে ইসরায়েলের কাছে নিয়ে যাচ্ছে
গত কয়েক মাসে পাকিস্তানের ইসরায়েলের সম্পর্ক - সরাসরি এবং গোপনভাবে - এমনভাবে বাড়ছে যা আগে অচিন্তনীয় মনে হত। সাম্প্রদায়িক কূটনৈতিক বৈঠক, প্রতীকী রাজনৈতিক ইশারা ও আঞ্চলিক কূটনৈতিক সমন্বয় - এসবই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভৌগোলিক-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি বড় পরিবর্তন শুরু হয়েছে।
এই পরিবর্তন তেমন কোনো একক ঘটনার ফল নয়; বরং এটি একটি সুপ্রসারিত কৌশলের অংশ, যা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষত, এটি সেই প্রক্রিয়ার অংশ যা বিশ্লেষকরা "আব্রাহাম একর্ডস ২.০" বলছেন।
কেন এমন কূটনৈতিক ধাপ
ইসরায়েল যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাহলে মুসলিম-বিশ্বে পাকিস্তানের প্রতীকী গুরুত্ব ও প্রভাব ইসরায়েলের পক্ষে উপকৃত হতে পারে। কারণ পাকিস্তান একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্র। অন্যদিকে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা মাপকাঠি অনুযায়ী, ভারতের ইস্রায়েল সহযোগিতা, শত্রু-প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অস্ত্রঘাট ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান হয়তো ইসরায়েলের সঙ্গে মেলবন্ধনকে একটি বীমা হিসেবে দেখছে।
কূটনৈতিক বাস্তবতায় কি হচ্ছে - কিছু দৃষ্টান্ত
২০২৫ সালের নভেম্বর-এর শুরুতে, লন্ডনে একটি পর্যটন মেলা চলাকালে,ইসরায়েলের পর্যটন বিভাগের একজন কর্তৃপক্ষ এবং পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী-উপদেষ্টার উপদেষ্টার মধ্যে খোলা ও ফটোসহ বিনিময় দেখা যায় - যা ঐতিহাসিকভাবে দুই দেশ যাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই,এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গা ছিল যা আগে প্রায় অসম্ভব।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে,পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ যখন জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে নিউইয়র্কে ছিলেন,ঐ সময় নিউইয়র্ক-ভিত্তিক একটি ইহুদি সাংগঠনের সভাপতিসহ ইসরায়েল-সংক্রান্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে গোপন বৈঠকের খবর পাওয়া যায়। যদিও বৈঠক পাকিস্তান সরকার বা সেই সংগঠন প্রকাশ্যে নিশ্চিত করেনি। তবে তারা অস্বীকারও করেনি,যা বিশ্লেষকরা গোপন কূটনৈতিক যোগাযোগ হিসেবে দেখছেন।
২০২৫ সালের ১৩ অক্টোবর,গাজা সংকট চলাকালে শার্ম আল শেখ সম্মেলনকে মুসলিম ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দেখানো হলেও,এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের একটি কূটনৈতিক প্রয়াস হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এইসব দৃষ্টান্ত - সরকারি,অ-সরকারি,প্রকাশ্য এবং গোপন-একসঙ্গে নির্দেশ দিচ্ছে যে,পাকিস্তান ইস্রায়েল সম্পর্ক কেবল একিকৃ্তভাবে নয়,বরং পরিকল্পিতভাবে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়েছে। এর প্রভাব - তা কেবল দু'দেশেই নয়, যদি পাকিস্তান এবং ইসরায়েল ধাপে ধাপে সম্পর্ক স্বীকৃতি বা নর্মালাইজেশনের দিকে যায়, তাহলে এটি মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের ভূমিকালেখা তৈরি করবে। পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তানের সঙ্গে ইসরায়েলের যোগ,বহু মুসলিম দেশের নিরাপত্তা-নীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে,এটি যুক্তরাষ্টের মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে পুনরায় সাজাতে এবং গাজা–পরবর্তী স্থিতিশীলতার পরিকল্পনাকে সম্প্রসারিত করতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে, প্রতিবেশী দেশগুলোর (যেমন ভারত, ইরান, আফগানিস্তান) সঙ্গে পাকিস্তান সম্পর্ক এবং ভারসাম্য নীতি বদলাতে পারে - যা দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক ও নিরাপত্তার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলবে।
এশিয়া টাইমস থেকে অনুদিত
Comments