জাতিসংঘ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন দিলে পিএ কর্মকর্তাদের বেছে বেছে হত্যা করা হবে: ইসরায়েলি মন্ত্রীর হুমকি
জাতিসংঘ যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কর্মকর্তাদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া উচিত হবে বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী উগ্রপন্থী ইহুদি নেতা ইতামার বেন-গভির।
গতকাল সোমবার ওৎজমা ইয়েহুদিত দলের এক সভায় বক্তৃতাকালে বেন-গভির শীর্ষ পিএ কর্মকর্তাদের 'সন্ত্রাসী' হিসেবে উল্লেখ করেন। একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
বেন-গভিরের হুমকির বরাত দিয়ে জেরুজালেম পোস্টের খবরে বলা হয়, 'যদি তারা ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে এবং জাতিসংঘ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বেছে বেছে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়াই উচিত হবে। কারণ, সবদিক থেকেই তাঁরা সন্ত্রাসী।'
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে আলাদাভাবে বিবৃতি দিয়ে বেন-গভিরের এ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের এ ধরনের মন্তব্য পদ্ধতিগত উসকানি।
মন্ত্রণালয় থেকে এ ধরনের মন্তব্যের জন্য বেন-গভিরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধও জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়, বেন-গভিরের এ ধরনের মন্তব্যের দায় ইসরায়েল সরকারকে নিতে হবে।
গাজা যুদ্ধ শেষ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের করা একটি খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে গতকাল সোমবার ভোট দিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
এ প্রস্তাবে গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা বাহিনী গঠনের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার কর্মসূচি শেষ করলে এবং গাজা পুনর্গঠনকাজ এগিয়ে গেলে 'ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্রগঠনে একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরিতে' সমর্থন দেবে জাতিসংঘ।
ফিলিস্তিনিদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ থাকায় এ প্রস্তাব নিয়ে ইসরায়েল ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
বেন-গভির বলেছেন, জাতিসংঘের ভোটে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ধারণা সামনে এগোলে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা উচিত।
বেন–গভির দম্ভের সঙ্গে আরও বলেন, 'কেৎজিয়ত কারাগারে তাঁর (মাহমুদ আব্বাস) জন্য একটি একক কারাকক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।'
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা তদারক করে। তবে ইসরায়েলি নেতারা পিএর নেতৃত্বে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়ে রেখেছে।
বেন-গভির এর আগেও ফিলিস্তিনিদের নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি গত শনিবারই তিনি ফিলিস্তিনি বলে কোনো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বই নেই বলে দাবি করেছেন।
নিজের ওই মিথ্যা দাবিতে বেন-গভির বলেছিলেন, 'ফিলিস্তিনি জনগণ বলে আসলে কিছু নেই। ফিলিস্তিনিদের বরং ইসরায়েলের ভূমিতে আরব দেশগুলো থেকে আসা অভিবাসীদের সমষ্টি বলে অভিহিত করা যায়, যারা সব জায়গায় সন্ত্রাস, হত্যাকাণ্ড ও হত্যাযজ্ঞের বীজ বপন করে।'
এই উগ্র ইহুদি নেতা ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি ছেড়ে স্বেচ্ছায় অন্য কোথাও চলে যাওয়ার প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সমালোচকেরা ফিলিস্তিনিদের স্বেচ্ছায় ভূমি ছাড়ার প্রস্তাবকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের সুপরিকল্পিত জাতিহত্যার অংশ বলে বর্ণনা করেছেন।
বেন-গভির ও নেতানিয়াহু সরকারের জোটে থাকা অতি ডানপন্থী দলগুলো থেকে শুরু করে দেশটির মধ্যপন্থী বিরোধী নেতারা, নিজেদের মধ্যে যত বিরোধই থাকুক, একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করতে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর অর্থমন্ত্রী বেনজালেল স্মোট্রিচ কার্যত অধিকৃত পশ্চিম তীরের গভর্নরের দায়িত্বে আছেন। পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড। কিন্তু ইসরায়েল এখন অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে একত্র করে ফেলতে চাইছে।
এ কাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন স্মোট্রিচ। তিনি এটাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখাতে চাইছেন।
ইসরায়েল বারবার জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজা উপত্যকায় সরকার পরিচালনার ক্ষমতা দিতে চাইছে না।
তবে গাজা নিয়ে মার্কিন প্রস্তাবনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকার কথা বলা হয়েছে, যদিও এ জন্য তাদের যথেষ্ট 'সংশোধনমূলক ব্যবস্থা' নিতে হবে।
Comments