নির্বাচনী ইশতেহারে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্তির আহবান নোয়াবের
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ হতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ। তিনি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে গণমাধ্যম কমিশন গঠন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
'বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কে আজাদ এসব কথা বলেন। আজ বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।
রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে নোয়াব সভাপতি একে আজাদ বলেন, 'আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এমন একটি ধারা থাকা উচিত—সরকার গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করবে, যেগুলো সত্য তা স্বীকার করে সংশোধন করবে, আর যেগুলো ভুল সেগুলোও জানাবে। এতে সরকারের সুনাম যেমন বাড়বে, গণমাধ্যমও দায়িত্বশীল হবে।'
এ কে আজাদ বলেন, দেশের ভালো শিক্ষার্থী এখন আর সাংবাদিকতায় আসতে চায় না। চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়লেও সাংবাদিকদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা খুবই দুর্বল। একজন সাংবাদিক যদি অসুস্থ হন, ভালো হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন না। চিকিৎসার খরচ দিতে পারেন না। (সাংবাদিকের) পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে বিল পরিশোধ করতেও হিমশিম খেতে হয়।
সংবাদপত্র শিল্পের সংকট তুলে ধরে নোয়াবের সভাপতি বলেন, একটি পত্রিকা ছাপাতে খরচ হয় ২৫ থেকে ২৮ টাকা, অথচ বিক্রি করতে হয় ১০ থেকে ১২ টাকায়। বিক্রয়মূল্যের প্রায় ৩৫ শতাংশ কমিশন দিতে হয় হকারদের। ফলে বিজ্ঞাপনের আয় ছাড়া সংবাদপত্র টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেলে বা বিল না দিলে অনেক পত্রিকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি জানান, করোনার সময় সরকার যখন বিভিন্ন খাতে সহায়তা দিয়েছে, তখন পত্রিকা শিল্পকে বাদ দেওয়া হয়। অথচ গণমাধ্যমও অর্থনীতির একটি বড় অংশ। তাঁর দাবি, সরকারি বকেয়া বিজ্ঞাপনের বিলই এখন ১০০ কোটির বেশি।
এ কে আজাদ সাংবাদিকদের পেশাগত ঝুঁকির কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একজন সাংবাদিক যদি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে চান, তাহলে তাঁর নিরাপত্তা থাকে না। তাঁকে বাড়িতে ঘুমাতে দেওয়া হয় না, পরিবারে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
ফরিদপুরের সাংবাদিক গৌতম দাস এবং সিরাজগঞ্জের এক ফটোসাংবাদিক হত্যার উদাহরণ টেনে এ কে আজাদ বলেন, এখনো জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের জীবন ঝুঁকিতে। অনেক সময় তাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া হয়, জেল-হুলিয়ায় ফাঁসানো হয়।
শেষে এ কে আজাদ বলেন, 'আমাদের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখলে শুধু সাংবাদিকেরাই নন, ভবিষ্যতের সরকারও এর সুফল পাবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সত্যিকার অর্থে গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করে, তবেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।'
Comments