কক্সবাজার সৈকতে বন্ধ হচ্ছে ‘লাইফ গার্ড’ সেবা, বাড়বে মৃত্যুঝুঁকি

কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের জন্য দুঃসংবাদ দিল সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থা। পর্যটকদের জীবন রক্ষাকারী বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠাটি অর্থসংকটের কারণে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের গোসলের সময় মৃত্যুঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি সংস্থাটি থেকে চাকরি হারাবেন ২৭ জন লাইফগার্ডসহ ৩৫ জন।
আন্তর্জাতিক (ইউকে) সংস্থা 'রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট'–এর (আরএনএলআই) অর্থায়নে ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নামা পর্যটকদের জীবন রক্ষায় সি-সেফ লাইফগার্ড সেবা দিয়ে আসছে।
সি-সেফ লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, অর্থসংকটের কারণে সি-সেফ প্রকল্পটির মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের তৎপরতায় দাতা সংস্থা প্রকল্পের মেয়াদ গত জুন পর্যন্ত বাড়ায়। এরপর দ্বিতীয় দফায় ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো তিন মাস বাড়ানো হয়। বর্তমানে তহবিল না পাওয়ায় চলতি মাসেই লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানে ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে মাসে গড়ে ১৪ লাখ টাকা জোগান দিতো সংস্থাটি।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২০১২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে স্রোতের টানে ভেসে যাওয়ার সময় অন্তত ৮০৭ পর্যটককে উদ্ধার করে প্রাণে বাঁচিয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। একই সময় গুপ্তখাল কিংবা স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিহত ৬৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে চাকরি হারাবেন ২৭ জন লাইফগার্ডসহ ৩৫ জন।
কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, 'হোটেলমালিকদের ব্যবস্থাপনায় ২৭ জন লাইফগার্ড পরিচালনার নির্দেশনা পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া হলেও হোটেলমালিকরা মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকার জোগান দিতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। তাতে কেউ সাড়া দিচ্ছেন না। দিলেও সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে আগামী অক্টোবর মাস থেকে লাইফগার্ড সেবা চালু করা সম্ভব হবে না।'
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, 'হোটেল ব্যবস্থাপনার নীতিমালায় লাইফগার্ড পরিচালনার বিষয়টি উল্লেখ আছে।
এ কারণে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা হচ্ছে, সৈকত এলাকার হোটেলগুলোর মাধ্যমে লাইফগার্ড সেবা চালু রাখতে হবে। এ বিষয়ে হোটেলমালিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বৈঠকও হয়েছে। ওই সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মালিকদের বলা হয়েছে, হোটেলের অর্থায়নে লাইফগার্ড সেবা চালু রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে সৈকত এলাকার বড় (তারকা) হোটেলগুলো তিন জন এবং ছোট হোটেলগুলোকে একজন করে লাইফগার্ডের বেতন পরিশোধ করতে হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান লাইফগার্ডদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।'
Comments