সর্বনিম্ন ১০০ টাকা রিচার্জে মেট্রোরেল যাত্রীদের অসন্তোষ প্রকাশ

রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দ্রুতগতির গণপরিবহন মেট্রোরেলে চড়ার স্থায়ী (এমআরটি বা র্যাপিড) পাসে যাত্রীদের ন্যূনতম ১০০ টাকা রিচার্জ করতে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে বিষয়টি। অভিযোগ উঠেছে, অনুরোধের আড়ালে যাত্রীদের ১০০ টাকা রিচার্জ করতে বাধ্য করেছে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
শুধু তা-ই নয়, ১২০ টাকা রিচার্জ করতে গেলে স্টেশনের টিকিট অফিস মেশিনের (টম) কর্মীরা ১০০ টাকা রিচার্জ করিয়ে বাকি ২০ টাকা ফেরত দিচ্ছেন যাত্রীদের। এর আগে যাত্রীরা ন্যূনতম ২০ টাকা রিচার্জ করে যাত্রা করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান সিদ্ধান্ত সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের অনেক সময় কম রিচার্জের প্রয়োজন হয়। বিষয়টি এমন নয় যে, সবাই ইচ্ছে করে কম রিচার্জ করেন। অনেক সময় প্রয়োজনও হয় কম, হঠাৎ পকেটে কম টাকা থাকে। যদি ১০০ টাকাই নির্ধারণ করা হয়, তাহলে অনেকেই প্রয়োজনীয় সময় মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া, অনলাইনে রিচার্জেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সাধারণ যাত্রীদের জন্য জুলুম।
তাদের অনেকে বলছেন, যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের অনেক সময় কম রিচার্জের প্রয়োজন হয়। বিষয়টি এমন নয় যে, সবাই ইচ্ছে করে কম রিচার্জ করেন। অনেক সময় প্রয়োজনও হয় কম, হঠাৎ পকেটে কম টাকা থাকে। যদি ১০০ টাকাই নির্ধারণ করা হয়, তাহলে অনেকেই প্রয়োজনীয় সময় মেট্রোরেল ব্যবহার করতে পারবেন না। এছাড়া, অনলাইনে রিচার্জেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সাধারণ যাত্রীদের জন্য জুলুম।
বিষয়টি ইতোমধ্যে লিখিতভাবে ডিএমটিসিএল-কে জানিয়েছে ফেসবুকভিত্তিক মেট্রোরেল যাত্রীদের গ্রুপ 'মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জার্স কমিউনিটি-ঢাকা'। চিঠিতে গ্রুপটির পক্ষ থেকে বলা হয়, 'মেট্রোরেল আধুনিক বাংলাদেশের গণপরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তবে দুঃখজনকভাবে সম্প্রতি যাত্রীদের অভিযোগে জানা যাচ্ছে যে, কিছু স্টেশনে কর্তব্যরত স্টাফরা যাত্রীদের ন্যূনতম পরিমাণ অর্থ (যেমন: ২০ বা ৫০ টাকা) রিচার্জ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। সমপরিমাণ ভাংতি টাকা প্রদানের পরও তারা ন্যূনতম ১০০ টাকা রিচার্জ বাধ্যতামূলক করে দিচ্ছেন, যাত্রীদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করছেন যা দায়িত্বে অবহেলার শামিল এবং যাত্রীদের মৌলিক ও ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন করছে।'
সেখানে আরও বলা হয়েছে, 'বর্তমানে এমআরটি পাস রিপ্লেসমেন্ট সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীরা একসাথে অধিক অর্থ রিচার্জ করলেও কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে সেই ব্যালেন্সসহ সম্পূর্ণ অর্থ হারিয়ে যায়। এতে যাত্রীরা অযাচিত আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, যা সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পেশা ও ব্যবসা পরিচালনার স্বাধীনতা এবং ভোক্তা অধিকারের ন্যায্য সুরক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।'
'বর্তমানে এমআরটি পাস রিপ্লেসমেন্ট সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীরা একসাথে অধিক অর্থ রিচার্জ করলেও কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে সেই ব্যালেন্সসহ সম্পূর্ণ অর্থ হারিয়ে যায়। এতে যাত্রীরা অযাচিত আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন, যা সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পেশা ও ব্যবসা পরিচালনার স্বাধীনতা এবং ভোক্তা অধিকারের ন্যায্য সুরক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক'; ফেসবুকভিত্তিক মেট্রোরেল যাত্রীদের গ্রুপ— মেট্রোরেল প্যাসেঞ্জার্স কমিউনিটি-ঢাকা
ওই গ্রুপের অ্যাডমিন ও নিয়মিত যাত্রী বলেন, মেট্রোরেলের এক্সিট ফেয়ার অফিস (ইএফও) কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা অনেকেই 'অনুরোধ' আর 'বাধ্যতামূলক'-কে একইভাবে দেখে যাত্রীদের বাধ্য করছেন। আমি নিজে আজ সচিবালয় স্টেশনের পূর্ব পাশের ইএফও-তে যাচাই করেছি। আমার কার্ডে ৪৩ টাকা ব্যালেন্স ছিল, ভাড়া ৪৫ টাকা। আমি ২০ টাকার নোট দিয়ে রিচার্জ করতে চাইলাম। কিন্তু দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি বললেন, ন্যূনতম ১০০ টাকা রিচার্জ করতে হবে। ব্যাখ্যা দিলেও তিনি রাজি হলেন না। বরং আমাকে টিকিট ভেন্ডিং মেশিনের (টিভিএম) লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ২০ টাকা রিচার্জ করে আবার এক্সিট গেটে টাচ করার নির্দেশ দেন। আমার সামনেই আরও কয়েকজন যাত্রীও একই সমস্যার সম্মুখীন হন।
তিনি আরও বলেন, কন্ট্রোল রুমে বিষয়টি জানালে ইএফও-কে ফোন দিয়ে ন্যূনতম রিচার্জ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। প্রশ্ন হলো— এখন কি প্রতিদিনই যাত্রীদের এমন বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে? যেহেতু ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকা, অন্তত এক্সিট গেটের ইএফও থেকে ছোট অঙ্কের রিচার্জের সুযোগ থাকা উচিত।
মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ এখন র্যাপিড বা এমআরটি পাসে কমপক্ষে ১০০ টাকা রিচার্জ বাধ্যতামূলক করেছে, যা আগে ২০ টাকা ছিল। এটি যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। কারণ, অনেক সময় ২০ টাকা ফেরত নিতে হচ্ছে। এছাড়া, কার্ড হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে ভেতরের পুরো টাকা গচ্চা যায়, যা যাত্রী অধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছেন অনেকে। এটি মেট্রোরেলের 'মনোপলি' আচরণের প্রতিফলন— বলছেন ভুক্তভোগীরা।
আরেক যাত্রী বলেন, আমি নিয়মিত মেট্রোরেলে যাতায়াত করি। হঠাৎ কোনো সময় আমার কাছে ১০০ টাকা নাও থাকতে পারে। কার্ডের স্থিতির বাইরে সেই যাত্রায় আমার হয়তো ১০/১৫ টাকা প্রয়োজন হবে। তখন আমি কী করব? তারা কোনোভাবেই ১০০ টাকা রিচার্জের কথা বাধ্য করতে পারে না।
মেট্রোরেল স্টেশনে দায়িত্বশীল পর্যায়ে কাজ করেন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এমন একজন কর্মী বলেছেন, আমাদের স্টেশনগুলোতে ১০০ টাকার নিচে রিচার্জ করার সুযোগ আছে। ২০, ৫০ ও ৭৫ টাকা রিচার্জ করা যায়। কিন্তু এটাকে কেন্দ্র করে অনেক যাত্রীই প্রায় সময় ইচ্ছা করে ২০ টাকা রিচার্জ করেন। এতে ইএফও-এর সামনে বেশ লম্বা লাইন হয়ে যায়। আবার অনেকে খুচরা নিয়েও গোলমাল করেন। ১০০ টাকা দিয়ে বলেন ২০ টাকা রিচার্জ করে দিতে। এসব এড়ানোর জন্য এমডি স্যার নিজে অনুরোধ জানিয়েছেন যাত্রীদের।
'যেহেতু নিয়মে লেখা আছে, তা-ই আমরা যাত্রীদের বাধ্য করতে পারি না। এক্ষেত্রে আমরা অনুরোধ করতে পারি'— যোগ করেন তিনি।
অন্য আরও একজন কর্মী জানান, এখন টিকিট ভেন্ডিং মেশিনে ৫০০ আর এক হাজার টাকার নোট নেওয়া হয় না। শুরুর দিকে খুব কঠোর ছিল। নতুন নোট ছাড়া মেশিন টাকা নিত না। তখন সব অঙ্কের টাকাই মেশিন নিত। কিন্তু যখন এটি শিথিল করা হলো, তখন প্রচুর ছেঁড়া ও নষ্ট নোট আসতে শুরু করল। এমনও এক হাজার টাকার নোট এসেছে, যেটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে গেলে ৬০০ টাকাও দেয় না। হঠাৎ করেই এমন টাকা প্রচুর আসতে শুরু করল। পরে কর্তৃপক্ষ কয়েক মাস ধরে টিকিট ভেন্ডিং মেশিনে ৫০০ ও এক হাজার টাকার নোট নেওয়া বন্ধ করে দেয়।
বিষয়টি জানতে একাধিকবার ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালককে কল দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কেউ-ই সাড়া দেননি
ন্যূনতম রিচার্জের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মেট্রোরেল পরিচালনা পর্ষদে যাত্রীদের একজন প্রতিনিধি রাখার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু কাজটি এখনো করেনি। এখন দেখতে পাচ্ছি শুধুমাত্র রিচার্জের ক্ষেত্রে তারা যাত্রীদের সঙ্গে এমনটি করছে তা নয়, তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে যাত্রীদের সঙ্গে জুলুম করছে। তারা গণশৌচাগারগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রেও মূল্য বাড়িয়েছে। যে টাইম টেবিলে মেট্রো ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এখন সেই টাইম টেবিলে মেট্রো ট্রেন চালানো হচ্ছে না। ফলে যাত্রীর স্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে যখনই অভিযোগ পাই, তখনই আমরা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে জানাই। কিন্তু তারা যাত্রীর স্বার্থ দেখার ক্ষেত্রে অনেকটা উদাসীন।
বিষয়টি জানতে একাধিকবার ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদসহ অন্যান্য পরিচালককে কল দেওয়া হয়। কিন্তু তারা কেউ-ই সাড়া দেননি।
Comments