হঠাৎ করে ড.ইউনুসের সমালোচনায় এনসিপি নেতারা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, লন্ডনে সিজদা দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এটি ঠিক হয়নি। অথচ তাকে জনগণের কাছে সিজদা দেওয়ার কথা ছিল। এখনও সময় আছে কেবলা পরিবর্তন করে জনগণের কাছে যাওয়ার"। শনিবার বিকালে রাজধানীর বাংলা মোটরে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে 'জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। একইরকম কথা বলেছেন দলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহও।
হঠাৎ কেন এই দুই নেতা অন্তবর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে এমন কথা বললেন তা নিয়ে আলোচনা দাবি রাখে। বোঝা যাচ্ছে সরকারের ভিতরে বাইরে নির্বাচন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী রাজনৈতিক অনেক বিষয় নিয়ে উত্তাপ বাড়বে।
এনসিপি সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন চায়। হাসনাত আবদুল্লাহর কথায় বর্তমান সংবিধান 'টেক্সট বুক অব ফ্যাসিজম'। তিনি এটাও বলেছেন যে, আসন দিয়ে এনসিপিকে কেনা সম্ভব নয়।
এই মন্তব্যগুলো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। 'গণপরিষদ' নির্বাচন আগেই দাবি করা হলেও, আগামী নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণার পর কেন এত জোরালো ভাষায় বলা হলো তা নিয়ে কথা উঠেছে।
বোঝা যাচ্ছে, নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক জটিলতা তৈরি হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই আয়োজন করার কথা।
এনসিপি দুই নেতা - হাসনাত ও পাটোয়ারী - এমন সময় গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী অবস্থান গ্রহণ করেছেন, যা অনেকটা বর্তমান নির্বাচনী কাঠামোতে সন্দেহ বা প্রতিষ্ঠিত 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের' অভাব প্রতিফলিত করছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন অতীতে ভেসে আসা প্রক্রিয়া ঠিক না করে দ্রুত নির্বাচন করা হচ্ছে। তারা মনে করছেন গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ অসম্ভব।
অনেকে মনে করছেন খোদ এনসিপির ভিতরেই টানাপোড়েন চলছে। দলটি ছয় মাস আগে গঠিত হয়ে অভ্যন্তরে নানারকম অভিযোগের মধ্যে পড়েছে। পদত্যাগ, গোলমাল ও অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ বেশি বেড়েছে। দলটির বিশ্বাসযোগ্যতা ক্রমে কমে, জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারে দুজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকায় দলটিকে 'কিংস পার্টি' হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে একজন উপদেষ্টা সম্পর্কে অভিযোগের পর অভিযোগ আসছে নানাভাবে। দলটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয়নি; কিন্তু এর মধ্যেই নেতিবাচক খবর অনেক বেশি দলটিকে ঘিরে। দেশে নিয়ন্ত্রণহীন 'মব সহিংসতা-কে' প্রশ্রয় দেয়ার এবং রাজনৈতিক সুবিধার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের সঙ্গে সহিংস সংঘর্ষ দলটির ভাবমূর্তি আরও নষ্ট করেছে।
এই পরিস্থিতি দলের নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্য দলটিকে গণমাধ্যমের আলোচনায় রাখছে ঠিকই, তবে কতটা সমাজে ও মানুষের মাঝে প্রভাব রাখতে পারছেন তা নিয়ে সংশয় আছে।
Comments