ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক ঘিরে যে প্রতাশা

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল আলোচিত বৈঠক হতে যাচ্ছে আগামীকাল। এই শীর্ষ বৈঠক থেকে প্রত্যাশিত ফল কী পাওয়া যাবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে ট্রাম্পের কথা বার্তায়। বৈঠকের আগেই তিনি বলে দিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে তাকে "অত্যন্ত গুরুতর পরিণতি" ভোগ করতে হবে। আবার আমেরিকার ফেডারেল আদালতের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাকের ঘটনায় ট্রাম্প পুতিনের দেশ রাশিয়াকে চোরও বলেছেন।
তাই প্রশ্ন উঠেছ এই বৈঠকের মাধ্যমে কি থামবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ? ততটা নিশ্চিত নন ট্রাম্প নিজেই। ট্রাম্পের মতে, আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আলাস্কার বৈঠকের আগে পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, দ্বিতীয় বৈঠকই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দুই নেতার আচরণ এবং অভিজ্ঞতা বিচার করলে এগিয়ে আছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সাবেক কেজিবি চিফ ভ্লাদিমির পুতিন। ট্রাম্পের মতো পুতিনের মাথা গরম করে কথা বলা ও কাজ করার দৃষ্টান্ত নেই। তা ছাড়া ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার নেতৃত্বে থাকা পুতিন এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে ৪৮টি বৈঠকের অভিজ্ঞতা থাকায় তাকে আলোচনায় এগিয়ে রাখছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। পাঁচজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ও কাজ করেছেন। তাঁরা হলেন বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন।
এই আলোচনার দিকে সবচেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের জানিয়েছেন যে, এই শীর্ষ বৈঠকের লক্ষ্য হবে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, ভূখণ্ড সংক্রান্ত ইস্যুতে ভলোদিমির জেলেনস্কির সম্পৃক্ততা ও চুক্তির অংশ হিসেবে নিরাপত্তার নিশ্চয়তার বিষয়ে ট্রাম্প রাজি হয়েছেন। ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলে তাঁর উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে যে, তিনি ইউরোপীয় নেতাদের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।
এর মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে যার উচ্ছশিত প্রসংশা করেছেন ট্রাম্প। এই বৈঠককে দশে দশ দিচ্ছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ-ও জানান,পুতিনের সঙ্গে দেখা করার পরে তিনি জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের ফোন করবেন। কিন্তু এরকম সুন্দর কথাবার্তা তিনি ধরেও রাখতে পারেন না। বলে দিলেন, শুক্রবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পরেও, রাশিয়া যদি পুনরায় ইউক্রেনে হামলা চালায় বা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে, তা হলে আমেরিকা উপযুক্ত পদক্ষেপ করবে।
ট্রাম্প পুতিনের বৈঠক নিয়ে একারণেই আশাবাদী নন জেলেনস্কি। বুধবার ইউরোপীয় নেতা এবং ট্রাম্পের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, "শুক্রবারের বৈঠকের আগে পুতিন সকলকে ধাঁধায় রাখতে চাইছেন"। তাঁর মতে, "পুতিন সকলের উপরে চাপ সৃষ্টি করে বোঝাতে চাইছেন ইউক্রেনের উপর রাশিয়া ক্ষমতা বিস্তার করতে সক্ষম।" জেলেনস্কি এই বৈঠক নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করছেন ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে আমেরিকা রাশিয়ার সমঝেতায়।
তবে সামগ্রিকভাবে রাশিয়া বলছে সে ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান না। পুতিন চান একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী, যে দেশটির সেনাবাহিনীর আকার ছোট হবে এবং তারা ন্যাটোর সদস্য হবে না। ইউরোপীয় ইনিয়ন এবং ন্যাটোও নিশ্চয়ই একদিন উস্কানি না দিয়ে বুঝতে পারবে যে, একটি শান্তিপূর্ণ ইউক্রেন কৌশলগতভাবে ইউরোপের জন্যও উপকারী।
Comments