অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে কতটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি?

চড়া মূল্যস্ফীতি কমিয়ে জনগণকে স্বস্তি দেয়া, রিজার্ভ পরিস্থিতি উন্নতি ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার চেষ্টার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছর শেষ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি সংকট ও ব্যাংকিং কার্যক্রমে এখনও রয়েছে জটিলতা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিনিয়োগে চাঞ্চল্য ফেরানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর ও টালমাটাল পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয়া নতুন সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে সফলতা মিলেছে ভোক্তা ব্যয়ের চাপ কমাতে।
সরকারি হিসেবে, এক বছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে নেমেছে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে কমেছে প্রায় অর্ধেক। যদিও সাধারণ মানুষ বলছেন, দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তবে কয়েক কয়েকমাস ধরে ফের বাড়তে শুরু করেছে। এতে বেড়েই চলেছে জীবনযাত্রার ব্যয়।
এদিকে ভেঙে পড়া ব্যাংক খাত সংস্কারে মিলেছে দৃশ্যমান অগ্রগতি। গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে গঠন করা হয়েছে নতুন পরিচালনা বোর্ড; তারল্য সংকট কাটাতে টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংকে সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আইনি সংস্থা নিয়োগের কথাও জানিয়েছে সরকার।
বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহও। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছর জুড়ে দেশে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়ের রেকর্ড। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরজুড়ে এসেছিল ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ বা ২৩.৯১ বিলিয়ন ডলার।
স্থিতিশীলতা ফিরেছে অস্থির মুদ্রাবাজারে। ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে এক বছর আগে ভীষণ চাপে পড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অস্থিতিশীল অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করতে সরকারের প্রচেষ্টা থাকলেও জ্বালানি সংকট ও আর্থিক খাতে এখনও রয়ে গেছে জটিলতা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে এবং এই সংকট আগামী অর্থবছর পর্যন্ত চলতে পারে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এখনো রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাংকে অসহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এলডিসি উত্তরণের সুযোগকে ভিত্তি করে অনেক প্রণোদনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ইডিএফ লোনের সুবিধাও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে। পাশাপাশি সুদের হার ক্রমেই বাড়ছে।
সংস্কারকে টেকসই করতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারকে আরও মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে স্বস্তি এসেছে এবং রিজার্ভের পতন রোধ করা গেছে; এখন এটি বাড়ছে। তবে বিনিয়োগে উদ্দীপনা জোগানো, মূল্যস্ফীতি কমানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আরও কাজ করা জরুরি।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, গত এক বছরে বিদেশি ঋণ-অনুদান কমতির বিপরীতে দায় শোধে সফলতা দেখিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার।
Comments