যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র দেবে, রাশিয়ার ওপর কঠোর শুল্কের হুমকি

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সরবরাহ করবে। একইসঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় না আসায় রাশিয়ার ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এই পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রতি মার্কিন নীতির কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সোমবার হোয়াইট হাউসে ন্যাটোর প্রধান মার্ক রুটের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রসহ কোটি কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম পাঠাবে। এই অস্ত্রের খরচ বহন করবে ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো।
তিনি বলেন, "আমরা অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করতে যাচ্ছি এবং সেগুলো ন্যাটোকে পাঠানো হবে।" ট্রাম্প বলেন, "যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি ৫০ দিনের মধ্যে 'অত্যন্ত কঠোর শুল্ক' আরোপ করবেন, যার মধ্যে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক অন্তর্ভুক্ত থাকবে।"
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পুতিনের শান্তি চুক্তি করতে অস্বীকৃতি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্রমশ হতাশ করেছে। রাশিয়া সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। মস্কোর দাবি, এই প্রস্তাব কিয়েভকে তার সৈন্য পুনর্গঠন এবং পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত করার সুযোগ দেবে। এর ফলে পুতিন ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।
ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "এর মানে হলো ইউক্রেন বিপুল পরিমাণে সামরিক সরঞ্জাম পাবে, যার মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।"তিনি আরও বলেন, "আমি যদি আজ ভ্লাদিমির পুতিন হতাম এবং আপনার ৫০ দিনের পরিকল্পনা ও এই ঘোষণা শুনতাম, তাহলে আমি ইউক্রেন নিয়ে আলোচনাকে আরও গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতাম।"
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ন্যাটো দেশগুলোর কাছে বিক্রি করার জন্য বিশ্বজুড়ে থাকা প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলো প্রত্যাহার করবেন এবং প্রতিরক্ষা জোটের মাধ্যমে তা বিতরণ করা হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র দূরপাল্লার রকেট বা অন্যান্য আক্রমণাত্মক অস্ত্র পাঠাবে কিনা তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
বৈঠকের সময় ট্রাম্প পুতিনের প্রতি বারবার তার হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "তার (পুতিনের) সঙ্গে আমার আলোচনা সবসময়ই খুব মনোরম হয়... আমি বাড়ি ফিরে ফার্স্ট লেডিকে বলি: 'আমি আজ ভ্লাদিমিরের সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের একটি চমৎকার আলোচনা হয়েছে।' তিনি বলেন: 'ওহ, তাই নাকি, আরও একটি শহরে হামলা হয়েছে'।"
ট্রাম্প বলেন, তার পূর্বসূরিদের মতো তিনি পুতিনের দ্বারা "বোকা" হননি এবং শেষ পর্যন্ত আলোচনার চেয়ে পদক্ষেপই জরুরি। আটলান্টিক কাউন্সিলের ইউরেশিয়া সেন্টারের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো মেলিন্ডা হারিং বলেছেন, কয়েক মাস ধরে পুতিনের ক্রমাগত হামলার পর ট্রাম্পের এই নীতি পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, "ট্রাম্প পুতিনকে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন। তিনি শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তিনি অনুভব করেছিলেন যে পুতিন তাকে ঝুলিয়ে রাখছেন। এর পাশাপাশি, প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা তাকে ইউক্রেনের শহর ও শিশুদের ওপর প্রতি রাতে হওয়া হামলার ছবি দেখাচ্ছিলেন।"
ক্রেমলিন এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, পশ্চিমারা দীর্ঘদিন ধরেই ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে আসছে। মস্কোর জন্য সংলাপ এখনো গুরুত্বপূর্ণ।
তবে রাশিয়ান সমাজে যুক্তরাষ্ট্র-ন্যাটোর এই ঘোষণাকে হতাশার সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার ইউলিয়া শাপোভালোভা।
তিনি বলেন, "ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এই সংঘাত শেষ হবে বলে আশা করা হয়েছিল। মানুষ দেখেছিল যে ট্রাম্প ইউক্রেনে শান্তি আনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন।"
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার রাতের ভিডিও ভাষণে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে "বড় প্রতিরক্ষা চুক্তি" নিয়ে কাজ করছেন, যদিও বিস্তারিত প্রকাশ করার সময় এখনও আসেনি।
জেলেনস্কি বলেন, "আমাদের জনগণের জীবন রক্ষায় সহযোগিতার প্রস্তুতির জন্য আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞ।"
Comments