সাগরে একের পর এক সতর্ক সংকেত

সাগরে পুরো জুলাইজুড়ে বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে জেলেদের অবশ্যই আবহাওয়ার সতর্ক বার্তাগুলো মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আর একের পর এক সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেতে দিশেহারা কক্সবাজার উপকূলের লাখো জেলে; একই সঙ্গে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ট্রলার মালিকরাও।
তাদের দাবি, গত ২০ দিনে ৪ দফায় সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। যার কারণে ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছেন না তারা।
জানা যায়, সাগরে মাছ শিকারে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় ১১ জুন। এরপর সাগরে যেতে প্রস্তুত হন কক্সবাজার উপকূলের জেলেরা। অনেক জেলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যান, আবার অনেকেই উপকূলে অবস্থান নেন। এরই মধ্যে উত্তাল হয়ে ওঠে সাগর, জারি হয় সতর্ক সংকেত। ইলিশ শিকার না করে উপকূলে ফিরে আসেন জেলেরা। এরপর থেকে বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল থাকে সাগর। আর একের পর এক জারি হয় সতর্ক সংকেত।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জুলাই মাসজুড়ে আবহাওয়া থাকবে বৈরী। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে জেলেদের অবশ্যই আবহাওয়ার সতর্ক বার্তাগুলো মেনে চলতে হবে।
শনিবার (০৫ জুলাই) আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে দমকা/ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ০৩ (তিন) নম্বর পুনঃ ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান বলেন, 'বর্ষাকালের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য, মৌসুমি বায়ু, ভারি বৃষ্টিপাত এসব হবে। বর্ষার এ সময়টাতে সাগর উত্তাল থাকবে। তাই এ ব্যাপারে জেলেদের সতর্ক থাকতে হবে। আবহাওয়া অফিস তাদের বুলেটিনগুলো জানিয়ে দেয়। কিন্তু এটি জেলেদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কমিউনিটির দায়িত্বও রয়েছে। তাই যখন সতর্ক সংকেত কিংবা সাগর উত্তাল থাকবে, কোনোভাবেই সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া যাবে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার কারণে অবশ্যই জেলেদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।'
এ দিকে সাগর উত্তাল থাকায় ইলিশ ধরতে সাগরে নামতে পারছে না কক্সবাজার উপকূলের কয়েক হাজার ট্রলার। বেকার হয়ে পড়েছেন এক লাখেরও বেশি জেলে। অধিকাংশ ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে বাঁকখালী নদীতে। আর সংসার কীভাবে চলবে, সে ভাবনায় দিন কাটছে জেলেদের। এদিকে লোকসান গুনতে গুনতে হয়রান ট্রলার মালিকরা।
৬ নম্বর ঘাটে নোঙর করা ট্রলার এফবি নিশানের জেলে কুতুব উদ্দিন বলেন, 'সাগর উত্তাল থাকায় ইলিশ ধরতে যেতে পারছি না। এখন সংসার কীভাবে চলবে, এই চিন্তায় রয়েছি।'
আরেক জেলে আরিফ বলেন, 'সাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাভাবে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ১০ বছরের জেলে জীবনে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে হতে হয়নি।'
এ দিকে জেলে ও ট্রলার মালিকদের সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, গত ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার মুহূর্তে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। গত ২০ দিনে ৪টি সতর্ক সংকেত জারি করা হয়। এখনো সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত চলছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া অনিরাপদ। ফলে কক্সবাজার সদরসহ মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ার ছোট-বড় অন্তত ৬ হাজার ট্রলার ঘাটে পড়ে আছে।
মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, লোকসান দিতে দিতে খুবই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ট্রলার মালিকরা; একই সঙ্গে জেলেরাও পরিবার নিয়ে কষ্টে রয়েছে। আমাদেরও জেলেদের দেয়ার মতো আর অর্থ নেই। তাই জেলে ও ট্রলার মালিকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করছি।
তবে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম বলেন, 'ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া হচ্ছে; যার কারণে সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা। এ বিষয়গুলো নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাজ করার আছে। কীভাবে জেলেদের সহায়তা করা যায় সেটি বিবেচনাধীন রয়েছে।'
কক্সবাজার আবহাওয়া জানায়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ১৩ বার ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেয়া হয়। আর রেকর্ড পরিমাণ এক হাজার ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
Comments