শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত

দেশের সবচেয়ে বড় ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে। শনিবার সকাল ৯টায় এই মাঠে ১৯৮তম জামাত শুরু হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী বন্দুকের গুলি ছোড়ার মধ্য দিয়ে জামাতের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে ইমামতি করেন বড়বাজার জামে মসজিদের খতিব, মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
নামাজ শেষে দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সকাল ৬টা থেকেই মুসল্লিরা ঈদগাহ ময়দানে আসতে শুরু করেন। এ সময়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। চার স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ মাঠে।
তিনটি আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে মেটাল ডিটেক্টরের তল্লাশির মাধ্যেমে মুসল্লিদের ঈদগাহে ঢুকতে দেওয়া হয়।
শোলাকিয়ায় ঈদুল ফিতরে প্রতিবছর কয়েক লাখ মুসল্লি জামাতে অংশ নিয়ে থাকে। তবে ঈদুল আজহায় লোক সমাগম অনেক কম হয়।
জানা গেছে, পশু কোরবানির কাজ থাকায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এই জামাতে অংশ নিতে পারেন না।
তবে আশপাশের কয়েক হাজার লোক জামাতে অংশ নিয়েছেন।
গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় মাঠ কিছুটা কর্দমাক্ত ছিল। এসব উপেক্ষা করেই উৎসবমুখর পরিবেশে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাইয়ের জঙ্গি হামলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। সকাল থেকেই ঈদগাহ ময়দানে বিজিবি সদস্যসহ র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ ও বোমা ডিসপোজাল টিমের সদস্যদের তৎপরতা ছিল।
ওয়াচ টাওয়ারসহ পুরো ঈদগাহ ময়দান সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় ছিল। এ ছাড়া ফায়ার ব্রিগেড, অ্যাম্বুলেন্সসহ মেডিক্যাল দল উপস্থিত ছিল। মাঠে দুই প্লাটুন বিজিবি, হাজারখানিক পুলিশ, শতাধিক র্যাব সদস্য ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কঠোর নিরাপত্তাবলয়। সেনা সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
নজরদারিতে আকাশে ছিল শক্তিশালী ক্যামেরাযুক্ত পুলিশের ড্রোন। মাঠ ও শহরসহ প্রবেশ পথগুলো সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মাঠে স্থাপিত কয়েকটি ওয়াচটাওয়ার থেকে দূরবীন নিয়ে নিরপত্তার দায়িত্ব পালন করে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করেন। ঈদগাহ এলাকায় তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ বেশ কয়েকটি মেডিক্যাল টিম এবং অগ্নিনির্বাপন দলও মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিলেন স্কাউট সদস্যরা।
ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজেম উদ্দীন বলেন, উৎসবমুখর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজন করতেই নিরাপত্তাকে প্রাধন্য দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আজহার জামাতে লোক কম হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ও তৎপরাতার কমতি ছিল না।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফোজিয়া খান বলেন, এবার উৎসবমুখর পরিবেশে শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। এবারের জামাতের ব্যবস্থাপনা ছিল খুবই ভালো। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে মুসল্লিদের।
ঈদের দিন শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশগ্রহণকারী মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। একটি ট্রেন ভৈরব থেকে, অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে।
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া মাঠ। এর আয়তন ৭ একর। প্রায় দুশো বছর ধরে এই মাঠে বিশাল ঈদের নামাজের জামাত হয়ে আসছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শোলাকিয়ার সাহেববাড়ির সুফি সৈয়দ আহম্মদ ১৮২৮ সালে তার নিজ জমিতে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন। ঈদের প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। পরে উচ্চারণ বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া এবং সেখান থেকে শোলাকিয়া শব্দটি প্রচলিত হয়েছে।
Comments