কী একটা অবস্থা!

এক নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে পড়েছে সরকারি প্রশাসন। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে আছে। নিজস্ব বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্দোলনে থাকায় অনেকদিন ধরেই অচল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর বিভিন্ন শাখা অফিস। এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এর প্রতিবাদ করে আসছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে অচল হয়ে আছে ঢাকা দক্ষিণ কর্পোরেশন এবং বিক্ষোভে উত্তাল নগর ভবনের আশপাশের এলাকা।
আন্দোলনে উত্তাল বেসামরিক প্রশাসনের প্রাণ কেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। 'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫'-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে সচিবালয়ের ভেতরে আজ তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তারা এই অনুমোদিত খসড়াটিকে 'নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন' আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলছেন দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভরত কর্মচারীরা সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশ গেট বন্ধ করে অবস্থান নেন। সব গেট বন্ধ থাকায় ফটক দিয়ে গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে পারছিল না।
সিটি কর্পোরেশনের বিষয়টি রাজনৈতিক, কিন্তু সচিবালয় আর এনবিআর তো সরকারের নিজস্ব একতিয়ার। অথচ মানুষ দেখছে কোন সমাধান হচ্ছে না।একটা নিলিপ্ত ভাব নিয়ে যেন সরকার দেখছে বিষয়গুলো। অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা ঠিক কোন পর্যায়ে গেলে রাষ্ট্রীয় এমন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়গুলোতে এমন অচলাবস্থা চলতে পারে,তা চুলচেরা বিচার প্রয়োজন। গত বছর আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারি দপ্তরগুলোয় যে স্থবিরতা এবং অস্থিরতা শুরু হয়েছিল তার কিছুটা থেমে আসার পর সম্প্রতি আবার তা মাথা চাড়া দিয়ের উঠেছে। প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড সচিবালয় এখন যা চলছে তা ভয়ংকর। এটা মাঠ পর্যায়ে বিস্তৃত হলে বিপর্যয় নেমে আসবে।
এমনিতেই প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, পদোন্নতি এবং ক্যাডার বৈষম্যের মতো বিষয়গুলো লেগেই আছে। তার মধ্যে এখন শুরু হয়েছে আন্দোলন। সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন আইনটি কেমন, তা যৌক্তিক কিনা, গণপরিসরে সেই প্রশ্নটি উত্থাপন করার দায়িত্ব সরকারের। সেরকম কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না যাতে সমস্যার সমাধান হয়।
একই অবস্থা চলছে এনবিআরে। এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নামে দুটি বিভাগ করে ১২ মে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। এর ফলে জনগণ যেমন সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে। অর্থ বছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব বিভাগে এমন সংকট আগে কোনদিন দেখেনি বাংলাদেশ।
এখানেও সরকারের সাথে আলোচনায় কোন ফল বয়ে আনছে না। কলম বিরতি চলছেই। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হলে সব অংশীজনকে আস্থায় নিয়ে করতে হয়। এর নানাদিক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে,সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া আগে থেকে চিন্তা করতে হয়। অন্যথায় যে বিশৃঙ্খলা হয়,জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সচিবালয়ের বর্তমান অচলাবস্থা তারই প্রমাণ।
Comments