ভারত পাকিস্তানকে যুদ্ধাবস্থা থেকে বের করে আনতে পারে আন্তর্জাতিক কূটনীতি

শেষ পর্যন্ত ভারত হামলা করল পাকিস্তানে। ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের কাশ্মীর অঞ্চলের নয়টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে ভারতীয় সামরিক বাহনী। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় অন্তত ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে পাকিস্তান জানিয়েছে।
গত ২২এপ্রিল ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার বদলা নিতেই ভারত এই হামলা করে। দিল্লি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে বলছে, এই সন্ত্রাসীরা ইসলামাবাদের মদদপুষ্ট।
ভারতের বিমান হামলায় নিহত ব্যক্তিদের 'প্রতিটি রক্তের ফোঁটার' প্রতিশোধ নেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তান সরকার দেশটির সামরিক বাহিনীকে অনুমোদন দিয়েছে ভারত আক্রমণ করার জন্য।
হঠাৎ করে দুই পারমানবিক শক্তিধর প্রতিবেশির মধ্য এই উত্তেজনাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছে না আন্তর্জাতিক মহল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে দুই দেশের প্রতি আহবান এসেছে উত্তেজনা পরিহার করে আলোচনা বসার জন্য।
ভারত কেন হামলা করল এটাই বড় প্রশ্ন। কারণ এখন পর্যন্ত ভারত কোন নির্ভোযোগ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি যে পেহেলগামের হামলা পাকিস্তানই করেছে বা পাকিস্তান থেকে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি এসে করেছে। যদি কেউ পাকিস্তান থেকে এসে করেও থাকে তাহলেও দায় মোদি সরকারের উপর পড়ে এই কারণে যে, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় অবহেলা ছিল। এতগুলো মানুষের জীবন চলে যাওয়ার দায় ভারত সরকার এড়িয়ে যেতে পারেনা।
এর আগে ২০১৬ এবং ২০১৯ সালে ভারতে দুটিবড় সন্ত্রাসী ঘটনার পরও ভারত পাকিস্তানের ভিতরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল। তবে সেগুলো দীর্ঘ উত্তেজনা তৈরি করেনি।
ভারত বলেছে যে তারা পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর জুড়ে নয়টি জঙ্গি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে। এগুলো পরিচালিত করছে লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি), জইশ-ই-মোহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিন। ভারতীয় মুখপাত্রের মতে, সীমান্ত থেকে মাত্র ৬-১৮ কিলোমিটার দূরে শিয়ালকোটে দুটি শিবির ছিল নিকটতম লক্ষ্যগুলির মধ্যে। সবচেয়ে গভীর আঘাত ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ১০০ কিলোমিটার দূরে বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মোহাম্মদের সদর দফতরে। নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মুজাফফরাবাদে একটি জঙ্গি আস্তানায়ও হামলা হয়েছে।
ভারতের এবারের হামলার ঘরন একদম ভিন্ন। আগে যতবার ভারত হামলা করেছে, সেগুলো সবই হয়েছে নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিক কাশ্মীরে। এবার আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে জঙ্গি সংগঠন লশকরে তাইয়েবা এবং জয়শে মোহাম্মদ পরিচালিত আস্তানায় আক্রমণ করা হয়েছে। দেখার বিষয় পাকিস্তানের বদলাটা কেমন হয়। পাকিস্তান যে পাল্টা হামলা করবে তা নিশ্চিত। তারপর উত্তেজনা কোন পর্যায়ে যায় সেটা নিয়েই শঙ্কা। সীমিত আকারেও হলেও দুই দেশ যুদ্ধে জড়াবে বলেই মনে করছে দুই দেশের বিশ্লেষকরা।
পাকিস্তানের জনমত দেশটির সামরিক বাহিনী বিরোধী অনেকদিন ধরেই। দেশের সবচয়ে জনপ্রিয় নেতা ইমরান খানকে জেলে দিয়েছে সেনা প্রধান। তাই সামরিক বাহিনী জনগণের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে ভারতে পাল্টা আঘাত হানবে বলে মনে কেরন না অনেকেই। কিন্তু এরপরও বাহিনীর উপর একটা নাগরিক চাপ আছে ভারতে পাল্টা হামলা চালানোর জন্য।
পাকিস্তানের ডন পত্রিকা বলছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। পাকিস্তানের অবশ্যম্ভাবী হামলার পরবর্তী তীব্রতা কমানোই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। আর সেখানেই আসবে সংকট কাটাতে কূটনীতির বিষয়টি। পাকিস্তান সংযত থাকার পরামর্শ পাবে। কিন্তু পাকিস্তানের হামলার পর দুই দেশ যাতে আরও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না যায় তা নিশ্চিত করার চাবিকাঠিই তখন হবে কূটনীতি।
Comments