যে কারণে যুদ্ধে জড়াবে না ভারত পাকিস্তান

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসীদের হাতে পর্যটক হত্যার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশের মধ্যে। সামাজিক মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের নাগরিকদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মানুষ জড়িয়ে পড়ছে নানা তর্ক বিতর্কে। বাংলাদেশের অনেকেও এতে যোগ দিচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকাগুলো এবং তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম দেখলে মনে হবে যুদ্ধ আসলে শুরুই হয়ে গেছে।
বাস্তবতা তা নয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্যা হিন্দু বা এনডিটিভি দেখলে বোঝা যায় ভারতে অনেক রয়ে সয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। পাকিস্তানের ডন এবং এক্সপ্রেস ট্রিবিউর দেখেও বোঝা যায় রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া যেমনই হোক পাকিস্তানও শান্তভাবেই সমস্যা মোকাবিলা করতে চায়।
ভারত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে এবং পাকিস্তানীদের ভিসা বাতিল, কূটনীতিকদের অপসারণ, আটারি সামিন্ত বন্ধ করা এবং সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল করাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। পাকিস্তানও বসে থাকেনি, পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে সীমান্ত বন্ধ করা, ভারতীয় নাগরিকদের বের করে দেয়া, কূটনীতিকদের বহিষ্কার এবং ভারতে উড়োজাহাজের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়া।
এগুলো চলবে। কিন্তু দুই পারমানবিক শক্তিধর প্রতিবেশি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধে জড়াবার কোন আশঙ্কা দেখছেন না দুই দেশেরই কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। ভারতের প্রায় এক লাখ সৈন্য মোতায়েন করা আছে গালওয়ানসহ চীনা সীমান্তে। যুদ্ধ লাগলে এদের নিয়ে আসতে হবে পাকিস্তানকে মোকাবিলা করতে, যা একেবারেই অসম্ভব বলে মনে করছেন সাবেক জেনারেলরা। কাশ্মীর ছাড়াও ভারতের জন্য স্পর্শকাতর অনেকগুলো রাজ্য আছে। মনিপুর ও নাগাল্যান্ড-এ সমস্যা লেগেই আছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ছত্তিশগড়ে মাওবাদীদের সাথেও লড়াই চলছে। পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ হলে এদের বসে থাকার কোন কারণ নেই।
সমস্যা আছে পাকিস্তানেও। বালুচিস্তানের স্বাধীনতাকামীদের কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বরং বলা চলে গত কয়েক মাস ধরে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে বালুচ লিবারেশন আর্মি। একটি পুরো ট্রেন ছিনতাই করেছিল বালুচ লিবারেশন আর্মি। এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা নিয়মিত আক্রমণ করছে তারা। এমনকি বান্নু সেনানিবাসেও তারা হামলা করেছিল। চলমান এই উত্তেজনার মধ্যেই গত শুক্রবার বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার কাছে একটি ব্যস্ত রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পাকিস্তানের অন্তত চারজন সেনা নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার তিনটি জায়গায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের তুমুল গোলাগুলি হয়েছে। এতে দুই সেনাসহ অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং শনিবার এতথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের সঙ্গে রয়েছে এক যুদ্ধ পরিস্থিতি। রয়েছে দেশের অভ্যন্তরে তালেবানসহ নানা প্রকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠির তৎপরতা। ভারতে সাথে যুদ্ধ লাগলে এরা সুযোগ নিবে এবং পাকিস্তানকে হয়তো বালুচিস্তান হারাতে হতে পারে।
এসব কারণে দুই দেশই সরাসরি সামরিক যুদ্ধ বাদে প্রক্সি যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। এটাই রাজনীতি। নরেন্দ্র মোদি ভারতের মানুষকে দেখাতে চান তিনি কিছু করছেন। পাকিস্তান চালায় সেনাবাহিনী। দেশের সেনা প্রধান জেনারেল সৈযদ আসিম মুনীরকেও সেই পথেই চলতে হচ্ছে। যুদ্ধের ফল যে কারো জন্যই সুখকর হবে না তা উভয় দেশই ভালোভাবে অনুধাবন করে। কারণ রাষ্ট্রের অখন্ডতাকে নস্যাৎ করে দেবে এই যুদ্ধ।
যুদ্ধের অর্থনীতিও এক বিশাল বিষয়। পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। একটা যুদ্ধকে সামলাবার মতো অর্থ তার হাতে নেই। ভারতের অর্থনীতি তুলনামুলকভাবে ভালো হলেও দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ চালালে তারও টিকে থাকা কঠিন। উভয় দেশই জানে বড় আকারের যুদ্ধ হলে তা তাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলবে। এই যুদ্ধে আসলে কেউই জিতবে না। দুটি দেশই পঙ্গু হয়ে যাবে।
Comments