কাশ্মীরে হামলা: নতুন করে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এই পাঁচ পদক্ষেপ হলো, পাকিস্তানের সাথে সিন্ধু পানি চুক্তি করা, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া, দিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনে নিযুক্ত সব সামরিক উপদেষ্টাকে বহিষ্কার করা, পাকিস্তানিদের জন্য সার্ক ভিসা বাতিল করা এবং দুই দেশের হাইকমিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংখ্যা ৫৫ থেকে ৩০ এ নামিয়ে আনা।
শুরুতেই ভারত বলেছে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পাকিস্তানের মদদ আছে। এর মধ্যেই পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন তেহরিক লবাইক ইয়া মুসলিম (টিএলএম)এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন লশকর-ই-ত্যায়েবার সহযোগী সংগঠন যেটি গঠিত হয়েছে কাশ্মীরে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য।
ভারত বলছে, পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ খানেক আগেই পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আসিম মুনির এই হামলার উস্কানি দিয়েছিলেন। এক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের কোনো শক্তি কাশ্মীরকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করতে পারবে না। পাকিস্তানের সেনা প্রধান এটাও বলেছিলেন যে, হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানের জীবন ধারা আলাদা বলেই পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল।
পাকিস্তান সরকার এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে এবং নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ১৯৯৯ সালের কার্গিল হামলাসহ ভারতে সংগঠিত সব জঙ্গি হামলায় কাশ্মীর মুজাহিদ-দের নামে হলেও সেগুলোতে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই সর্বশেষ ঘটনায় ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করছে।
নতুন করে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আলোচনার কেন্দ্রে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। কারণ পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সেই বক্তৃতার কয়েকদিন পরেই এমন হামলার ঘটনা ঘটলো। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন পেহেলগামের হামলা ১৬ এপ্রিল আসিম মুনিরের দেয়া ভাষণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
অনেকদিন ধরেই চাপে আছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ট্রেনে হামলা করে শত শত মানুষ হত্যা, বান্নু সেনানিবাসে হামলাসহ একটা প্রচন্ড বৈরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে। পরিস্থিতি জটিল এবং রক্তক্ষয়ী করছে আফগানিস্তানের সাথে সংঘাতও। এমনকি ইরানের সাথেও সম্পর্ক স্বাভাবিক নয় পাকিস্তানের। এর মধ্যেই সেনা প্রধানের বক্তব্যের পর এ রকম হত্যাকাণ্ড নতুন করে পরিস্তিতি জটিল করছে পাকিস্তানের জন্য।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন,এই হামলা সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোও বলছে যে, ভারত কোন প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করছে।
বেঝা যাচ্ছে যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটবে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছিল এবং দেশ বিদেশ থেকে সেখানে প্রচুর পর্যটকের সমাগম ঘটছিল। সেখানকার নাগরিকরাও পরিস্থিতির স্বাভাবিকতায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছিল।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, হামলার জোরালো জবাব দেওয়া হবে। আর সেটা শুধু যারা হামলা চালিয়েছে তাদের নয় বরং যারা এই কাজের পেছনে আছে তাদেরও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তাহলে কি ভারত সামরিকভাবেই জবাব দিতে যাচ্ছে? যদি সেদিকে ভারত যায় তাহলে আরেকটি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ অত্যাসন্ন বলেই ধরে নিতে হবে। এবং যেহেতু ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক অস্ত্রধারী, তাই বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে যেকোন সামরিক পদক্ষেপ।
Comments