সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে: কাদের গনি চৌধুরী
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন,সংস্কৃতি হচ্ছে সুন্দরের সাধনা। সংস্কৃতি মানুষকে সভ্য করে, জীবনের সৌন্দর্যকে বিকশিত করে। সংস্কৃতি চর্চার ভেতর দিয়ে মানুষের মন সুন্দর হয়,হিংসা বিদ্বেষ নাশ হয়, জীবনকে মহিমান্বিত করে। অপসংস্কৃতি যা আমাদের চেতনাকে দীপ্ত করে না,ঐতিহ্যকে মহিমা দেয় না, আচরণকে শালীনতা দেয় না।
শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ কালচারাল রিপোরেটার্স এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার ৩০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি অভি চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কন্ঠ সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজা উদ্দিন স্টালিন, বিশ্ব বরেণ্য যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, তাশিক আহমেদ,জিয়াউল কবির সুমন, এরফানুল হক নাহিদ, রাজু আলীম, কামরুল হাসান দর্পণ, রিমন মাহফুজ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দুলাল খান ও পান্থ আফজাল।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন,সংস্কৃতি জীবনকে সুন্দরের পথ দেখায় আর অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দরের পথে নিয়ে যায়, অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি জাতীয় মূল্যবোধকে গলাটিপে হত্যা করে, বিবেকের দরজায় কড়া লাগায়। অপসংস্কৃতি মানুষকে তাঁর মা, মাটি ও দেশের প্রতি ভালবাসা থেকে দূরে সরিয়ে নেয় অপসংস্কৃতির চমক মরীচিকার মত। এর চমক মানুষকে বিবেক বর্জিত পশুতে পরিণত করে।
তিনি বলেন,তরুণরা অপসংস্কৃতিতে আকৃষ্ট হচ্ছে। তার কারণ এতে চমক আছে উত্তেজনা আছে আর আছে ক্ষণিক আনন্দ। এর একটা মোহ আছে। আমাদের মনে রাখতে হবে একটি দেশের ভবিষ্যত হলো সেই দেশের তরুণ সমাজ। অপসংস্কৃতির হিংস্র ছোবলে এ তরুণ সমাজ যদি বিপথগ্রামী হয়, তাহলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
পশ্চিমা চটকদার সংস্কৃতি আমাদের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূলে কুঠারাঘাত করেছে। ফলে আমরা আমাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ক্রমেই সাংস্কৃতিক দৈন্যের দিকে ধাবিত হচ্ছি।বিশ্বায়নের এ যুগে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আসবেই। স্থানীয় বাজার দখলের সঙ্গে সংস্কৃতির প্রতিটি উপাদানকে মুনাফার ক্ষেত্রে পরিণত করাই কনজুমারিজমের ধর্ম। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিনদেশি ছায়াছবি, ভিনদেশি গান বাজবেই। তাই বলে চোখবুজে, কানে তুলো দিয়ে থাকা যাবে না। 'কান পাতলেই অভাবিতের দেখা মিলে, মুখ খুললে কেবল ভাবিতের প্রকাশ। ভোগবাদী মতবাদ ঝড়ের মতো এসে জীবনের সব মুকুল ঝরিয়ে দেয়। সংস্কৃতি ঠিক তার উল্টো, দখিন হাওয়ার মতো জীবনের সব ফুল ফুটিয়ে তোলাই তার কাজ-মোতাহার হোসেন চৌধুরীর এ বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে লোকজ সংস্কুতির বিকাশকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন,সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হলে গ্রামকে হৃষ্টপুষ্ট করতে হবে আবহমান ঐতিহ্যের রূপরসে। সঙ্গে নাগরিক সুবিধাও পৌঁছাতে হবে গ্রামীণ জনপদে। তবে গ্রামবাসীকে পুরবাসীর ড্রয়িংরুমের অন্তর্জালে বন্দি করা যাবে না কিছুতেই। ফিরিয়ে আনতে হবে গ্রামের খোলা প্রান্তর, সবুজ খেলার মাঠ। নদী, খাল, বিল, জলাশয়কে দখলমুক্ত করে নাইয়রী আনার, নৌকাবাইচের উপযোগী করতে হবে। লোকনৃত্য, জারি, সারি, আউল,বাউল, মুর্শিদী, ভান্ডারী,ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, পল্লীগীতি, লোকগীতি, ফোক ও ফোকলোর, লালনগীতি, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রগীতি, হাসান রাজার গান হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না।।নতুন প্রজন্মকে মুঠোফোনের ঝাঁঝালো রশ্মি থেকে ফিরিয়ে এনে দেখাতে হবে সিগ্ধ চাঁদের আলো, শরতের আকাশ, তারা ভরা রাত। ফেরাতে হবে যাত্রাপালা, কবি গানের লড়াই। তবেই না নতুন প্রজন্ম গেয়ে উঠবে কবি শামসুর রাহমানের লেখা ও জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লার গাওয়া গান-
ফসলের মাঠে, মেঘনার তীরে
ধুধু বালু চরে, পাখিদের নীড়ে
তুমি আমি লিখি প্রাণের বর্ণমালা।
সুস্থ সংস্কৃতির জন্য শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা জানি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে। এরা একে অন্যের পরিপূরক। সুস্থ সংস্কৃতি চাইলে আমাদের নতুন প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমেই আলোকিত মানুষ গড়া সম্ভব। মনে রাখবেন অপশক্তিকে প্রতিহত করার অন্যতম উপায় হলো সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা।
Comments