ফ্রিজের ঠান্ডা ভাত আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর?
আমাদের দেশের মানুষের খাদ্য তালিকার অন্যতম খাবার ভাত। কিন্তু যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন, তাদের জন্য ভাত সবসময় এক ধরনের চিন্তার বিষয়। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে একটি ফুড হ্যাক। যেখানে বলা হচ্ছে ভাত রান্না করে ঠান্ডা বা ফ্রিজে রেখে পরে গরম করলে নাকি সেটা আরও স্বাস্থ্যকর করে যায়। অনেকে একে অবিশ্বাস্য বললেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেনএটির পেছনে সত্যিই আছে কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ।
যেভাবে ঠান্ডা ভাত হয় স্বাস্থ্যকর
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রান্না করা ভাত ঠান্ডা বা ফ্রিজে রাখলে তার মধ্যে থাকা কিছু ডাইজেস্টেবল স্টার্চ পরিবর্তিত হয়ে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চে পরিণত হয় ডায়েটিশিয়ান রাশী চাহাল জানান, রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ আসলে এক ধরনের আঁশের মতো কাজ করে। এটি শরীরে পুরোপুরি হজম হয় না, ফলে রক্তে শর্করার প্রবাহ ধীরে ধীরে বাড়ে।
অন্যদিকে, ডা. মনোজ আগারওয়াল, পরামর্শ দেন, এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মোট স্টার্চ কমে না, তবে এর ধরন বদলে যায়। ফলে খাবারের পর হঠাৎ করে রক্তে শর্করার বৃদ্ধি কিছুটা কমে।
ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে কতটা কার্যকর: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো 'ম্যাজিক কিউর' নয়, তবে কার্যকর একটি ছোট পরিবর্তন। গবেষণায় দেখা গেছে, ঠান্ডা করে পুনরায় গরম করা ভাত খেলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে।
ডা. আগারওয়ালের জানান, রান্না করা ভাত সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখতে হবে এবং খাওয়ার আগে ভালোভাবে গরম করতে হবে। এতে ভাত নিরাপদও থাকবে এবং রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চও বজায় থাকবে।
তবে মনে রাখতে হবে ভাত ঠিকভাবে না রাখলে ব্যাসিলাস সেরিয়াস নামের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে, যা ফুড পয়জনিংয়ের কারণ হতে পারে। ডা. আগারওয়াল সতর্ক করে বলেন, রান্নার দুই ঘণ্টার মধ্যে ভাত ফ্রিজে রাখুন, এবং খাওয়ার আগে ভালোভাবে গরম করুন। কাঁচা বা ঠান্ডা ভাত কখনোই খাওয়া উচিত নয়।
রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ শুধু রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় না, এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। রাশী চাহালের ভাষায়, এটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।
রান্না করা ভাত ঠান্ডা করে পরে গরম করে খেলে তাতে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি হয়, যা রক্তে শর্করার প্রভাব কিছুটা কমায় এবং হজমে সাহায্য করে। তবে এটি কোনো অলৌকিক সমাধান নয় বরং এক ধরনের স্মার্ট কিচেন হ্যাবিট। যাদের ডায়াবেটিস আছে বা ভাত খেতে ভালো লাগে কিন্তু রক্তে শর্করার চিন্তা করেন তারা এই পদ্ধতি একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তবে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তার পরই সিদ্ধান্ত নিন কারণ সবার শরীর এক নয়।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
Comments