অন্ত্র সুস্থ রাখতে ৫টি অভ্যাস বর্জন করুন

অন্ত্র হলো পরিপাকতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা খাবার হজম, পুষ্টি শোষণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করে। এটিকে 'দ্বিতীয় মস্তিষ্ক' বলা হয় কারণ এটি মস্তিষ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং আমাদের সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে উপকারী অণুজীব বাস করে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
অন্ত্র বা পেট সুস্থ রাখতে হলে জীবনযাপনের কিছু অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখাও জরুরি। আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে পেটের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
এই বিষয়ে হার্ভার্ড ও এমস (AIIMS) থেকে প্রশিক্ষিত লিভার ও অন্ত্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সৌরভ শেঠি সম্প্রতি পাঁচটি অভ্যাসের কথা বলেছেন, যা নীরবে অন্ত্রের ক্ষতি করছে।
পাঁচটি অভ্যাস সহজ ভাষায় নিচে তুলে ধরা হলো—
১. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া
প্যাকেটজাত খাবার, ইনস্ট্যান্ট নুডলস বা ফাস্ট ফুডের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারে কৃত্রিম উপাদান, অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, চিনি এবং নুন বেশি থাকে, কিন্তু ফাইবার কম থাকে। এই খাবারগুলো অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকে কমিয়ে দেয়, ফলে হজমের সমস্যা তৈরি হয় এবং অন্ত্রের ভেতরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. বেশি মিষ্টি ও কম ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া
মিষ্টি এবং কম ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খেলে অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হতে শুরু করে। এর ফলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ে এবং অন্ত্রের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। এই ভারসাম্যহীনতা সারা শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
৩. কম শাকসবজি খাওয়া
অন্ত্রকে সুস্থ রাখতে প্রচুর শাকসবজির প্রয়োজন। সবজিতে থাকা পুষ্টি এবং ফাইবার ভালো ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সবজি কম খেলে হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য হয় এবং অন্ত্রের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। এতে পুষ্টি শোষণ কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই প্রতিদিন নানা রঙের সবজি খাওয়া জরুরি।
৪. মধ্যরাতে ভারী খাবার খাওয়া
গভীর রাতে ফ্যাট বা চিনিযুক্ত ভারী খাবার খেলে হজমতন্ত্রের কাজ ব্যাহত হয়। কারণ, ঘুমের আগে শরীর বিশ্রামে থাকে এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলে। এই সময়ে খেলে বদহজম, অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও পেট ফাঁপা হতে পারে। এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়িয়ে হজমের সমস্যা ও প্রদাহ তৈরি করে।
৫. অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বা সীমার বাইরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেলে অন্ত্রের স্বাভাবিক এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়লেও, এই ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা যাওয়ায় হজম প্রক্রিয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অন্ত্রের পরিবেশ খারাপ হয়। ফলে অন্ত্রে সংক্রমণ এবং স্বাস্থ্যগত জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং তার সঙ্গে ফাইবারযুক্ত খাবার ও প্রোবায়োটিক খেতে হবে।
Comments