সকালের নাশতায় যে খাবারগুলো রাখা উচিত

সকালের নাশতা দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাবার। অনেকেই ওজন বাড়ার ভয়ে নাশতা বাদ দেন, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আবার কেউ কেউ নাশতা করলেও সেটি স্বাস্থ্যসম্মত হয় না। পুষ্টিবিদরা বলছেন, দিনের শুরুটা পুষ্টিকর খাবার দিয়ে হলে শরীর যেমন ভালো থাকে, তেমনি মানসিক সতেজতাও বাড়ে। কিন্তু অনেকেরই প্রশ্ন থাকে সকালে কী খাওয়া উচিত? বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজলভ্য খাবার প্রতিদিন সকালের নাশতায় রাখলে শরীর পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি।
ডিম
সকালের নাশতায় ডিম অন্যতম সেরা খাবার। এতে প্রোটিন, ভিটামিন ও নানা খনিজ উপাদান থাকে। ডিমের যেকোনো পদ সহজেই তৈরি করা যায় এবং এটি শরীরকে দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়।
চিয়া সিড
চিয়া সিডকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। হাড় মজবুত রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি কার্যকর।
ফল
কলা, আপেল, কমলা, আঙুরসহ মৌসুমি ফল সকালের জন্য দারুণ। ফলে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম ও আঁশ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও হজমশক্তি উন্নত করে।
ওটস
ওটস সমৃদ্ধ ফাইবার, প্রোটিন, আয়রন, ফলেট ও ভিটামিন বি গ্রুপে। এটি দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চাইলে ওটসে ফল মিশিয়ে খেলে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়।
গ্রিন টি
সকালে গ্রিন টি খেলে কফির মতোই কাজ করবে। গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি , বি৫, ডি, ই, সি, ই, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ ও সামান্য ক্যাফেইন। গ্রিন টির উপকারিতা অনেক। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করে।
কফি
কফিতে থাকা ক্যাফেইন আপনাকে সতেজ রাখবে এবং মনোযোগ বাড়াবে। এছাড়াও এতে পলিফেনল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিও রইয়েছে। তবে চিনি অবশ্যই বাদ দিতে হবে। গবেষণা থেকে জানা যায় একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে ৪০০ মিলিগ্রাম কফি খেতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফিন না খাওয়াই ভালো।
বেরি জাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি বা অন্যান্য বেরিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং হজমে সহায়ক।
বাদাম
সকালের নাশতায় বাদাম রাখার অভ্যাস শরীরের জন্য খুবই উপকারী। চিনাবাদাম, আখরোট, কাজু বা পেস্তা—যেকোনো বাদামই হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, উচ্চমাত্রার প্রোটিন, আঁশ, ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও শক্তির ভালো উৎস। এগুলো হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেইয়ার পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে। নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে, হাড় মজবুত হয় এবং দীর্ঘসময় পেট ভরা থাকে, ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালের নাশতা বাদ দিলে দিনের কাজের দক্ষতা কমে যায়। নিয়মিত নাশতায় এসব খাবার রাখলে শরীর ও মন দুটোই থাকবে প্রাণবন্ত। দিনের শুরুটা কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে সকালের নাশতার ওপর। স্বাস্থ্যকর নাশতা যেমন শরীরকে সারাদিনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়, তেমনি মনকেও রাখে সতেজ। কিন্তু অনেকেই হয় নাশতা বাদ দেন, নয়তো যা খান তা শরীরের জন্য উপকারী নয়। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিন সকালে খাবারের তালিকায় কিছু নির্দিষ্ট খাবার রাখলে শুধু এনার্জি নয়, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
সূত্র: হেলথলাইন
Comments