কীভাবে ঘুমানো উচিত জানালেন চিকিৎসক

অবসর কিংবা কাজের ফাঁকে ঘুমই একমাত্র আপনাকে ভালো রাখতে পারে। ঘুমের বিকল্প কিছু নেই। এ কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে বলে থাকেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ঘুম ভালো হলেও এই ঘুমানোর কৌশলের কারণেই আবার অনেক সময় শারীরিক নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাই ঘুমের ধরন স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের ক্ষেত্রে আপনি কোন পাশ হয়ে ঘুমাচ্ছেন, পিঠে ভর করে ঘুমাচচ্ছেন কিনা―এ সবের ওপর নির্ভর করে সুস্থতা। হজম, শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাবও নির্ভর করে ঘুমের ধরনে। ঘুমের কৌশল নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দিল্লির ওয়েলনেস হোম ক্লিনিক ও স্লিপ সেন্টারের পালমোনোলজিস্ট ডা. বিকাশ মিত্তল। এ চিকিৎসকের ভাষ্য অনুযায়ী ঘুম নিয়ে তাহলে জেনে নেয়া যাক।
পাশ ফিরে ঘুমানোর উপকারিতা:
অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, পাশ ফিরে ঘুমানো জনপ্রিয় ও কার্যকরী ঘুমের পজিশন। এ ব্যাপারে ডা. বিকাশ বলেন, পাশ ফিরে ঘুমানো হলে নাক ডাকা কমার সম্ভাবনা থাকে, মেরুদণ্ড সুস্থ থাকে। বিশেষ করে অ্যাসিড রিফ্লাক্স ও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্তদের জন্য পাশ ফিরে ঘুমানো উপকারী।
পাশ ফিরে ঘুমানোর অসুবিধা:
দীর্ঘ সময় পাশ ফিরে ঘুমানো হলে কাঁধ ও নিতম্বে চাপ পড়ার সম্ভাবনা থাকে। মুখের একপাশে বলিরেখা বা চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। আবার একপাশে ঘুমের অভ্যাসের কারণে একপাক্ষিক ব্যথাও হতে পারে।
পিঠে ভর দিয়ে ঘুমানোর সুবিধা:
এভাবে ঘুমানো হলে ঘাড়, মাথা ও মেরুদণ্ড ভালো অবস্থানে থাকে। যাদের জয়েন্ট বা ঘাড়ে ব্যথা রয়েছে, তারা এভাবে ঘুমালে উপকার পাবেন। এ ব্যাপারে ডা. বিকাশ বলেন, চিৎ হয়ে ঘুমানো হলে বলিরেখা রোধে উপকার পাওয়া যায় এবং শরীরের ওজন সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে শরীরে। এতে হাড়ের ওপরও চাপ কমে।
অসুবিধা:
চিৎ হয়ে ঘুমানো হলে অনেকেরই নাক ডাকা বা স্লিপ অ্যাপনিয়া বাড়ার ঝুঁকি থাকে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য চিৎ হয়ে ঘুমানো বিপজ্জনক। এতে গর্ভের ভ্রুণের দিকে রক্তপ্রবাহ হ্রাস পেতে পারে। হজমজনিত সমস্যা বা অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভোগা ব্যক্তিদের চিৎ হয়ে ঘুমানোও ঠিক নয়।
কীভাবে ঘুমাবেন:
ডা. বিকাশের মতে, বাম পাশে ঘুমানো অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমাতে ও হজম উন্নত করতে উপকারী। মাধ্যাকর্ষণ অনুযায়ী, এভাবে ঘুমানো বর্জ্য কোলনের মধ্যে দিয়ে সহজেই চলাচল করতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বাম পাশ হয়ে ঘুমানো হৃদপিণ্ড ও ভ্রুণে রক্তপ্রবাহ উন্নত করে থাকে। ডান দিকে ঘুমানো কখনো কখনো হৃদরোগীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও এতে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
কোনভাবে ঘুম এড়িয়ে যাবেন:
স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগী: চিৎ হয়ে ঘুমানো এড়িয়ে যেতে স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্তদের।
গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): বাম পাশে ঘুমানো ভালো। তবে চিৎ হয়ে ঘুমানো যাবে না।
অন্তঃসত্ত্বা নারী: বিশেষ করে তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময় চিৎ হয়ে ঘুমানো এড়িয়ে যেতে হবে।
কাঁধ বা নিতম্ব ব্যথা: পাশে ঘুমানোর সময় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট ব্যবহার করা উচিত।
গদি ও বালিশের গুরুত্ব:
ঘুমের ভঙ্গি বা ধরনের পাশাপাশি ব্যবহৃত গদি ও বালিশের মান গুরুত্বপূর্ণ। ভালো মানের গদি ও ঘাড়ের সহায়ক বালিশ ঘুমের গুণমান ও শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ফলে ঘাড়, কোমর বা মেরুদণ্ডের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হয় না।
পরামর্শ:
ঘুমের একাধিক কৌশল থাকলেও সবার জন্য সব কৌশল উপযুক্ত নয়। কারও জন্য একটি কৌশল ভালো হলেও অন্যজনের সেটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই ঘুমের ভঙ্গি নির্বাচনের সময় আপনার আরাম, শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসকের পরামর্শ বিবেচনা করতে হবে। আর কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
Comments