সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল: বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপ, এক সপ্তাহে ৯৫১ জন শিশু ভর্তি
আবহাওয়ার পরিবর্তনের পাশাপাশি শীতের আগমনী বার্তায় ঠান্ডা অনুভূত হওয়ার কারণে হঠাৎ করে সুনামগঞ্জে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এ কারণে ভিড় বেড়েছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে। গত এক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে ঠান্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন নবজাতক ও শিশুরা। ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় কারণে হাসপাতালের নির্ধারিত শয্যায় স্থান হচ্ছে না শিশুদের। শয্যা সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শিশুকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের তথ্যমতে, গত এক সপ্তাহে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) থেকে বুধবার (২৬ নভেম্বর) পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট ৯৫১ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ভর্তির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০ নভেম্বর ১১২ জন, ২১ নভেম্বর ১২৫ জন, ২২ নভেম্বর ১৩৯ জন, ২৩ নভেম্বর ১৩৫ জন, ২৪ নভেম্বর ১৩৭ জন, ২৫ নভেম্বর ১৪৮ জন শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন। সর্বশেষ বুধবার (২৬ নভেম্বর) হাসপাতালে ভর্তি ছিল ১৫৫ জন শিশু, যা ওয়ার্ডের ধারণক্ষমতা (৫০ শয্যা) থেকে তিনগুণেরও বেশি।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের অনেকেই নিউমোনিয়াসহ মারাত্মক শ্বাসকষ্ট নিয়ে লড়ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সুস্থতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সংকটে ফ্লোরে থাকা প্রতিটি শিশুর দিকেই সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন নার্স ও চিকিৎসকরা। নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা শিশুদের জন্য নেবুলাইজেশনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে ওষুধযুক্ত বাতাস।
দিরাই উপজেলার কিতাম্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা জমির মিয়ার ৪০ দিন বয়সী ছেলে মাহিম। শুরুতে ঠান্ডা জনিত কারণে তাকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার দিন ভর্তি রাখা হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসক তাকে সদর হাসপাতালে রেফার করেন। মাহিমের বাবা জমির মিয়া জানান, 'শুরুতে দিরাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার দিন ভর্তি ছিল। অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় ডাক্তাররা সদর হাসপাতালে রেফার করেন। এখানে আসার পর জানতে পারলাম ঠান্ডা জনিত কারণে নিউমোনিয়া দেখা দিয়েছে। ডাক্তার ভর্তি থাকতে বলছেন। ভালো হওয়ার লক্ষণ আছে, এখন দেখি কী হয়।'
তাহিরপুর উপজেলার বড়দল গ্রামের ৩ মাস বয়সী মোয়াজও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। গত চার দিন ধরে সে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। মোয়াজের বাবা লিটন মিয়া বলেন, 'ডাক্তার জানিয়েছেন নিউমোনিয়া হয়েছে এবং পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। সুস্থ হওয়ার আগপর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।'
শহরের বড়পাড়ার ২ মাস বয়সী আলিফ হাসান গত দশ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তার বাবা অমিত হাসান জানান, 'সন্তানের শ্বাসকষ্ট কমাতে নিয়মিত নেবুলাইজার দিয়ে গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে ঠান্ডা নামায় এই সমস্যা হয়েছে বলেও জানান তিনি।'
শহরের হাসননগরের ৮ মাস বয়সী ছেলে জাকারিয়াও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। গত এক সপ্তাহ ধরে সে হাসপাতালে ভর্তি। জাকারিয়ার বাবা জহুর মিয়া বলেন, 'ছেলের শরীরে ঠান্ডা লাগার কারণে নিউমোনিয়ার লক্ষ্মণ দেখা দিছে। ডাক্তার জানিয়েছেন ১৪টা ইনজেকশন কোর্স শেষ করার পর ছুটি মিলবে।'
সদর উপজেলার গোঁয়ারচড়া গ্রামের ২ বছর ৪ মাস বয়সী মাহদি হাসান তিন দিন ধরে ভর্তি আছে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে। তার বাবা সাজিনুর রহমান বলেন, 'ঠান্ডার কারণেই মূলত বাচ্চার এই অবস্থা। বাচ্চাটা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক, এই প্রার্থনা।'
শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সরা জানান,'হঠাৎ ঠান্ডা নেমে যাওয়ায় শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এই কারণেই হাসপাতালে শিশুদের চাপ বেড়েছে। জনবল সংকটের মধ্যদিয়েও অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও পেশাগত দায়িত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে সেবা দেওয়ার স্বার্থে আন্তরিকতার সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ঠান্ডাজনিত কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। ঠান্ডা বাড়ার সাথে সাথে রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। আমরা জনবল সংকটের মধ্যেও সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি রোগীদের সেবা দিতে। অভিভাবকদেরও এই সময়ে শিশুদের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার কথা জানান তিনি।' ##
Comments