মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলা: অজ্ঞাত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা

মানিকগঞ্জে বাউল শিল্পীদের ওপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের কয়েকজন বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেছেন আহত বাউল শিল্পী আব্দুল আলিম। সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন।

জানা গেছে, রোববার (২৩ নভেম্বর) প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে অংশ নিতে আসা শিল্পীদের ওপর 'তৌহিদি জনতা' ব্যানারে সহস্রাধিক আলেম সমাজের কিছু ব্যক্তি হামলা চালান। এতে বেশ কয়েকজন বাউল শিল্পী আহত হন। আহতদের মধ্যে তিনজন মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সোমবার বিকেলে আহত শিল্পী আব্দুল আলিম (পিতা—ইউসুব আলী, গ্রাম—সাকরাইল, শিবালয়) সদর থানায় এসে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একই ঘটনায় রোববার 'তৌহিদি জনতা'র পক্ষ থেকেও একটি অভিযোগ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে আরও একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

তৌহিদি জনতার অভিযোগে বলা হয়, শহরের বিজয় মেলার মাঠের সামনে তাদের সমাবেশ চলাকালে আগে থেকে বাঁশ, কাঠের লাঠি, লোহার রড ও পাইপ নিয়ে বাউল শিল্পীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাদের চারজন আহত হয়েছেন বলেও তারা দাবি করেন।

অন্যদিকে বাউল শিল্পীদের মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাউল শিল্পী ছোট আবুল সরকারের মুক্তির দাবিতে বিজয় মেলার মাঠে মানববন্ধনের জন্য শিল্পীরা জড়ো হলে তৌহিদি জনতার ব্যানারে কয়েকজন আলেম সমাজের ব্যক্তি অতর্কিত হামলা চালায়। কেউ পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে, কেউ পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেন। এ সময় হামলাকারীরা শিল্পীদের বাড়ি থেকে বের করে মারধর করে রক্তাক্ত করে ফেলে। গুরুতর আহত তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

ওসি কামাল হোসেন বলেন, "বাউল শিল্পী আব্দুল আলীম অজ্ঞাত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন এবং আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।" পুলিশ সুপার মোছাম্মদ ইয়াছমিন খাতুন বলেন, "ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই গ্রেপ্তার সম্ভব হবে।"

উল্লেখ্য, গত রোববার (২৩ নভেম্বর) ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটূক্তি ও আল্লাহকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাউল শিল্পী আবুল সরকারের শাস্তি ও মুক্তির দাবিকে কেন্দ্র করে তৌহিদি জনতা ও বাউল শিল্পীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।