দুদকেও দুর্নীতিও আছে: ড. আবদুল মোমেন
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, 'দুদকে শুধু দীর্ঘসূত্রিতা নয়, দুদকেও দুর্নীতিও আছে। যারা সেবাদাতা তার মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারি যত প্রতিষ্ঠান আছে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সেবাগ্রহীতাদের কিছু অভিযোগ আছে। অভিযোগ দেওয়া অব্যাহত থাকবে, আমরা চেষ্টা করে যাবো ক্রমাগত ভাবে সে বিষয়গুলো সমাধান করার। আমরা নিয়মিত ভাবে ''রেইড'' করে যাচ্ছি। আমাদের এই হস্তক্ষেপে কিছুটাতো উপকার হচ্ছে।'
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে সিলেটে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১৯১তম গণশুনানিতে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেটের সাদাপাথর লুটকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, 'সাদাপাথর সেখানে ছিল না, পরে এসেছে এটা সত্য। এখানে কারা জড়িত, সেটা আপনারা আমাদের চেয়ে ভালো জানেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে আপনারা কি তাদের পার্লামেন্টে চান, নাকি চান না?'
এর আগে সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ের ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন দুদক চেয়ারম্যান। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নির্বাচনি হলফনামায় প্রার্থীদের দেশের সম্পদের পাশাপাশি বিদেশের সম্পদের হিসাব বিবরণী দিতে হবে। আমরা সম্পদের বিবরণী চাচ্ছি, সেখানে বিদেশি সম্পদেও হিসাব না দিলে তা অন্যায় হবে। পাশাপাশি অনুপার্জিত সম্পদ যাদের থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
দুদকের নানা সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'দুদকে আমাদের সহকর্মীরা অনেক দুর্নীতির তথ্য চাপা দেয়, গণমাধ্যম তা করে না। দুদক বিচারকারী না। দুদকের দায়িত্ব মামলার তথ্য-উপাত্ত আদালতে উপস্থাপন করা। এর বিচার করবেন আদালত। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার কৃষি সম্পত্তি ছিলো ৫ দশমিক ২ একর, তবে আমরা অনুসন্ধান করে পাই ২৯ একর। শুরুতে সেই নমিনেশন বাতিল হওয়ার কথা কিন্তু তা বাতিল হয় নাই। দুদক সেটি তদন্ত করে বের করলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি।'
গণশুনানিতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি বা বঞ্চনার শিকার হওয়া নাগরিকরা মোট ৭৩টি অভিযোগ সিলেট জেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানদের উপস্থিতিতে কমিশনের সামনে তুলে ধরেন। পরে এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে যথাযথ নিষ্পত্তির আশ্বাস দেওয়া হয়।
এ সময় সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠতেই এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের লাইব্রেরিয়ান শেখর দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।
অভিযোগকারী বিশ্বজিৎ দাস জানান, 'শেখর দাস তাঁর কাছ থেকে চাকরির কথা বলে দুই লাখ টাকা নেন। কিন্তু পরে চাকরি না দিয়ে অর্থও ফেরত দেননি। অভিযোগ শোনার পর দুদক চেয়ারম্যান বরখাস্তের নির্দেশ দিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।'
গণশুনানিতে পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ ছাড়া পাসপোর্ট না পাওয়া, হাসপাতালের ১৫ টাকার টিকিট ২০ টাকা নেওয়া, গ্যাস সংযোগে অনিয়মসহ একাধিক অভিযোগ ওঠে। প্রতিটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং দুদকের সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা–উন–নবী, রেঞ্জ ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, এসএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মু. মাসুদ রানা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
Comments