নানান চ্যালেঞ্জিং জীবনযাত্রাতেও সফল চাঁদপুরের গানের শিল্পী নন্দিতা
একজন নারীর সাংস্কৃতিক অঙ্গণে নিজের চ্যালেঞ্জিং জীবনযাত্রাতেও সফল চাঁদপুরের গানের পাখি নন্দিতা দাস। গ্রামীণ পরিবেশ হতে বেড়ে ওঠা এই নারীকে সুপরিচিত গায়িকা হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারি দিতে হয়েছে নানান প্রতিকূলতা। আর এই পুরো সংগ্রামী জীবনে নিজের আগ্রহ ও একাগ্রতাকেই তিনি কাজে লাগিয়েছেন। ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে নিজের গান চর্চার ক্যারিয়ারের আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।
জানা যায়, নন্দিতা দাসের জন্ম ১৯৯০ সালের পহেলা মে। তিনি ইলিশের বাড়ী খ্যাত জেলা চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের আলীগঞ্জ এলাকার মন্টু চন্দ্র দাস ও কনিকা রানী দাসের সন্তান। ছোট বেলা থেকেই তার গানের প্রতি ছিল প্রচন্ড ভালোবাস ও আগ্রহ। আর তা থেকেই মাত্র ১০ বছর বয়সেই সংগীত শিক্ষার হাতেখড়ি হয় হাজীগঞ্জের অন্যতম সঙ্গীত গুরু ওস্তাদ নিহার রঞ্জন হালদার (মিলন) এর হাতে ২০০০ সালে। এরপর হাজীগঞ্জ উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে ৩ বছর ব্যাপী সংঙ্গীতের বিভিন্ন শাখায় শিক্ষা গ্রহন করেন। পরবর্তীতে সারদা দেবী সংগীত নিকেতন থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও সাধারণ সঙ্গীতের উপর ৫ বছরের কোর্স সম্পূর্ন করেন।
আরও জানা যায়, নন্দিতা দাস হাজীগঞ্জের সঙ্গীত শিল্পী মানিক রায়, চাঁদপুরের প্রবীণ সংগীত গুরু শান্তি রক্ষিত, কুমিল্লার প্রবীণ সংগীত গুরু অলোকা দাসের কাছে সংঙ্গীত এর বিভিন্ন শাখায় তালিম নেন। এরপর সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকেই সংগীত শিক্ষক নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১২ সালে শাহরাস্তি সংগীত একাডেমির শিক্ষক হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষকতার যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে তিনি শাহরাস্তি কালচারাল ইনস্টিটিউট, হাজীগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি, হাজীগঞ্জ পৌর কিশোর-কিশোরী ক্লাব এবং হাজীগন্জ মৈএী শিশু উদ্যানে সংগীত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
নন্দিতা দাসের পরিবার থেকে জানা যায়, এক সময় সংগীত শিল্পী নুরে আলম সিদ্দিকীর অনুপ্রেরণায় ২০০৮ সাল থেকে মঞ্চে গান গাওয়া শুরু করেন নন্দিতা দাস। সেই থেকে একজন পেশাদার শিল্পী হিসেবে নন্দিতা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চে গান পরিবেশন করে নিজের দর্শক শ্রোতা ও জনপ্রিয়তা তৈরি করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও পার্শবর্তী দেশ ভারতের আগরতলা, কলকাতাসহ বিভিন্ন শহরে গান পরিবেশন করে নন্দিতা।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে সংগীত শিল্পী নন্দিতা দাস বলেন, ২০১৪ সাল হতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'পল্লীগিতী' শাখায় সংগীত শিল্পী হিসেবে তালিকা ভুক্ত হয়ে রঙের বাজার, হিজল তমাল, নব-জাগরণ, শেকড়ের গানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত ভাবে গান পরিবেশন করছি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ বেতারে 'পল্লীগীতী ও আধুনিক গান' শাখায় সংগীত শিল্পী হিসেবেও তালিকাভুক্ত হয়ে নিয়মিত ভাবে গান পরিবেশন করছি। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়াও মাছরাঙা টেলিভিশন, মাই টিভি, এটিএন বাংলা, বাংলা ভিশন, বাংলা টিভিসহ দেশের অধিকাংশ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই আমি গান পরিবেশন করেছি। এগুলোর মধ্যে আধুনিক গান, নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, লোক গানের পাশাপাশি বেশ কিছু মৌলিক গানও রয়েছে। এখন অবদি প্রায় ২০টির মতো মৌলিক গান রেকর্ড রয়েছে আমার। যা বিভিন্ন টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হয়েছে।
নন্দিতা দাস বলেন, আমার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালায় কর্তৃক উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পদকসহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছি। এককথায় গানই আমার একমাত্র নেশা ও পেশা। আপাদমস্তক একজন গানের মানুষ হিসেবে আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা হলো নিজের প্রতিষ্ঠিত নিশিতা সংগীত একাডেমীর মাধ্যমে সংগীত শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো এবং গানের সাথে জীবন অতিবাহিত করা। আমি ও আমার পরিবারের জন্য সবার আশির্বাদ চাই।
Comments