গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব
বাঙালি ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব। মাঘের স্নিগ্ধ সকালে কৃষ্ণাদিয়া শেখ আব্দুর রাজ্জাক আলিম মাদ্রাসায় এ পিঠা উৎসবের বাহারি পিঠার সমাহার ঘটে। পিঠার স্বাদ গ্রহন করে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। আগামীতেও এমন আয়োজনের কথা জানান আয়োজকেরা।
পিঠা বাঙালী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পিঠার স্বাদ শীতকে আরো মোহনীয় করে তোলে। স্নিগ্ধ শীতের সকালে, পড়ন্ত দুপুরে কিংবা আবছায়া গোধূলির ফুরফুর মেজাজে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে! বিভিন্ন ঋতুতে বিশেষ বিশেষ পিঠার রেওয়াজ রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) দিনব্যাপী কৃষ্ণাদিয়া শেখ আব্দুর রাজ্জাক আলিম মাদ্রাসার ক্যাম্পাসের পিঠা উৎসব, উপবৃত্তি প্রদান ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত ৬টি স্টলের শতাধিক বাহারি পিঠার সমাহার ঘটে। গ্রাম বাংলার চিতই, ভাপা, পুলি, তক্তি, নকশি পিঠা, ডিমের পুডিং, পাটি সাপটা, ঝাল চন্দ্রকোনা, চন্দনকুলি, দুধ খেঁজুর, নারকেলের চিড়া, রসপান, হৃদয়হরন, গোকুল পিঠাসহ হরেক রকমের প্রায় ৫০ প্রকারের পিঠা নিয়ে বসে শিক্ষার্থীরা।
পিঠার স্বাদ গ্রহন করতে ও কিনতে মাদ্রাসার মাঠে ভীড় করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। উৎসবে মেতে উঠে বিভিন্ন রকমের পিঠার স্বাদ গ্রহন করেন তারা। উৎসবে স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষক ও এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে পুরো অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। একই অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার ৫০ জন শিক্ষার্থীর হাতে ৪০ হাজার টাকা উপবৃত্তি ও শেষে মেলায় অংশ নেওয়া ৬টি স্টলের সবার হাতে পুরস্কাক তুলে দেয়া হয়।
মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন গোপালগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি উপসচিব ও পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সুনির্মল রায়, ব্যারিস্টার মনোজ কুমার ভৌমিক, নবকাম পল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান ও অত্র মাদরাসার অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক বিকাশ কুমার পাল।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণাদিয়া শেখ আব্দুর রাজ্জাক আলিম মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ নাজিম উদ্দিন বলেন, এই মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজ ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে এগিয়ে গেছে। পুরো মাদরাসা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে,উপবৃত্তি চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে আধুনিক শ্রেণিকক্ষ, স্মার্ট লাইব্রেরি ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা মোবাইলের ক্ষতিকর ব্যবহার থেকে দূরে থেকে ইসলামি আদর্শে গড়ে উঠুক। তাই পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উপবৃত্তি প্রদান—এসবই শিক্ষার্থীদের মনন বিকাশের অংশ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গোপালগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির উপসচিব ও পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুধু পাঠ্যবই নয়, শিক্ষার্থীদের নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় বিকাশের জন্য এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল যুগে মোবাইল ফোন এবং ভার্চুয়াল জগতের আসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে রাখতে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের কোনো বিকল্প নেই। এমন পিঠা উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে হারানো ঐতিহ্য ফিরে আসবে বলে মনে করেন এই পরিচালক। #
Comments