প্যারিসে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসীদের

পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারাবাহিক মানবাধিকার লঙ্ঘন' এর অভিযোগ করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভা করেছে ফ্রান্সে বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসীরা।
১ জুন প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে লা ভোয়া দে জুম্ম ( জুম্মদের কণ্ঠ) এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
প্রতিবাদ সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া আদিবাসী মানবাধিকার রক্ষাকর্মী রানী ইয়ান ইয়ান।

লা ভোয়া দে জুম্ম এর কার্যকরী কমিটির সদস্যা সমাপ্তি চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক পার্থ দেওয়ানের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন লা ভোয়া দে জুম্মর সভাপতি রেমি চাকমা।
অন্যান্যদের মধ্যে ম্যাকসুয়েল চাকমা, ড. মৃণাল চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন। আলোচকরা 'ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী' হিসেবে নয় আদিবাসী হিসাবে সরকারের কাছে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করেন। পাশাপাশি আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণার বাস্তবায়ন চান তারা।

সভায় স্বরণীকা চাকমা কবিতা পাঠ ও শায়েরী চাকমা, সমাপ্তি চাকমা এবং সৃজনী চাকমা, শিশু শিল্পী হৃদ্যতা দেওয়ান আদিবাসী নৃত্য প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চিংমা খিয়াং-এর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ড, বান্দরবানের বম আদিবাসীদের মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী রাখা, ভূমি রক্ষা আন্দোলনের নেতাদের গ্রেফতার, আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং সামরিক নিপীড়নের মতো একাধিক ঘটনা তুলে ধরা হয়। বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সকল নাগরিকের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে জুম্ম জনগণ এখনো নির্যাতন, দখল ও বৈষম্যের শিকার।

সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে ফ্রান্স সরকার ও জাতিসংঘের প্রতি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
বক্তাগণ যে ৯টি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন :
অবিলম্বে বম আদিবাসীদের মুক্তি প্রদান। চিংমা খিয়াং এর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করা। ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন
"অপারেশন উত্তরণ" বন্ধ করে বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা। দখল করা জমি ফেরত দেওয়া ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি। জাতিসংঘের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অভিযুক্ত সেনাদের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বন্ধ করা। জুম্ম জনগণকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান। সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী অপরাধীর বিরুদ্ধে দ্রুত, স্বচ্ছ ও কঠোর বিচার নিশ্চিত করা। জুম্ম নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক অনন্য প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক এলাকা, যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে, এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও জীববৈচিত্র্যের মডেল হতে পারে।
Comments